করোনার ধাক্কায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থা টালমাটাল। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভিন্ন হওয়ার কিছু নয়। যেহেতু অধিকাংশ নিত্যপণ্যের জন্য আমদানির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আগুনে পুড়তেই হচ্ছে মানুষকে। সেই আগুনে ঘি ঢালল ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি। এরপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন, ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে, মজুতও যথেষ্ট পরিমাণে আছে ফলে কোনো ঘাটতি হওয়ার কথা নয়; তাহলে চাল কিনতে কেন সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে? এর উত্তর হতে পারে দুইটি—হয় উৎপাদন ও মজুত নিয়ে সরকার সঠিক তথ্য দেয়নি, বাড়তি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে অথবা বাজারে সিন্ডিকেট করে এই অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের এক মন্ত্রী তো বলেই দিলেন, বিএনপির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। কথা হচ্ছে, বিএনপি যেখানে মিছিল-সমাবেশ করতে রাস্তাতেই নামতে পারে না, সেখানে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে গোটা দেশে অস্থিরতা তৈরি করে দিয়ে এত বড় ‘সাফল্য’ দেখিয়ে ফেলল! আবার আরেক মন্ত্রী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাজার পরিস্থিতি মনিটর করছেন। গতকাল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জনজীবনে অস্থিরতা নিয়ে এক অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য নিয়ে তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, কোথায় তাঁরা মানুষকে আশ্বস্ত করবেন, উল্টো এসব কথাবার্তা বলে বিভ্রান্ত করছেন!
যে পণ্য নিয়ে এখন বেশি আলোচনা সেটি হচ্ছে—ভোজ্য তেল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের চাপে দেশেও একাধিকবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরেও বাজারে এখন সয়াবিন তেল নেই। বাজারে তেলের মজুত ঠেকাতে খোলা তেল বিক্রির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এদিকে সয়াবিন তেলের ৬০ শতাংশই খোলা অবস্থা বিক্রি হয়, যার মূল ভোক্তা মূলত নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষেরা। বাড়তি দামের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতেও সামর্থ্যহীন তারা। তখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর তো হবেই। টিসিবির ট্রাকের আশায় মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে, কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না, হাতাহাতিতে জড়াচ্ছে, মানুষ ট্রাকের পেছনে পাগলের মতো দৌড়ছে, চলন্ত ট্রাকের ওপর হামলে পড়ছে। দেশে যেন দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে!