পাঠক নেই, আছেন একজন কেয়ারটেকার। যিনি বছরের পর বছর ধরে ১৬৬ বছরের পুরনো বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিতে দায়িত্ব পালন করছেন। বয়সের ভারে কেয়ারটেকার যেমন ন্যুব্জ পড়েছেন, তেমনি লাইব্রেরি ভবনটিও জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই লাইব্রেরিতে পাঠক আসেন না। একই সঙ্গে বরিশাল জেলার ৫৫টি লাইব্রেরির অধিকাংশই পাঠক শূন্যতায় এখন তালাবদ্ধ। সাত-আটটি ছাড়া বাকি সবগুলো লাইব্রেরি বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা আছে সেগুলোতেও পাঠক নেই। বই ছেড়ে স্মার্টফোনে ব্যস্ত পাঠকরা। এজন্য লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। এমনটি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি বন্ধের কারণ
২০১৩ সালে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা পর্ষদের সর্বশেষ গঠিত কমিটির সদস্য কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও উড়িষ্যা চারটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পাঠাগার হচ্ছে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। পূর্বে লাইব্রেরিটি ছিল নগরীর বিবির পুকুর পাড়ের ব্রিটিশ আমলের একটি ভবনে। পরবর্তী সময়ে ওই ভবনটি পৌরসভার কাছে ভাড়া দিয়ে লাইব্রেরি সরিয়ে বরিশাল নগরীর বাধ রোডে নেওয়া হয়। এটাই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে লাইব্রেরি সরিয়ে নেওয়ায় পাঠক বিমুখ হওয়া শুরু হয়।
শিবলু আরও বলেন, ২০০৪ সাল থেকে পাঠক কমতে থাকে। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় চলে আসে। একপর্যায়ে পাঠক আসা বন্ধ হলে লাইব্রেরি অযত্ন ও অবহেলায় বছরের পর বছর পড়ে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে ভবনের অবস্থাও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তার মধ্যে বর্ষা মৌসুমে কক্ষগুলোতে পানি পড়ে। এজন্য সংস্কার করা হলেও তাও বেশিদিন টেকেনি। একমাত্র কেয়ারটেকার মো. শহিদ সেখানে অবস্থান করছেন। আর কোনও কর্মচারী না থাকায় সেখানে ঝাড়ু দেওয়া হয় না। ১৫ বছরের ধুলাবালুতে একাকার হয়ে আছে লাইব্রেরিটি। কেয়ারটেকারকে কিছু বলার নেই। সেও ঠিকমতো বেতন পায় না। তারপরও বই পাহারা দিচ্ছেন। তা না হলে যেটুকু ছিল তাও লুটপাট হয়ে যেতো। এজন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাই।