আজ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। এ দিবসটি পালন করার একটি ইতিহাস আছে। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে মার্চ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করা হয়ে আসছিল। মন্ত্রিসভায় দিবসটি পালনের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর। ২০১৫ সালে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস একই দিনে, অর্থাৎ ২৬ মার্চ হয়ে যাওয়ায় ওই বছর ৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মতিপত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে মার্চের শেষ সপ্তাহের পরিবর্তে অন্য কোনো দিনে এটি উদযাপন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি ১০ মার্চকে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে ছয় বছর ধরে এ দিবসটি যথাযোগ্য আয়োজনের মাধ্যমে দেশব্যাপী উদযাপিত হয়ে আসছে। এ দিবসটি পালন করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ- সে প্রশ্নের উত্তর বোধ করি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের কাছেই রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানজনিত ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বাংলাদেশের মানুষের দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান রয়েছে। বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেসব দূরদর্শী ও বাস্তব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেগুলো এ দেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। গত এক দশকে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণেই জাতিসংঘ ও দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর প্রধানদের কাছ থেকেই এসেছে এ স্বীকৃতি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ইতিবাচক দিকগুলো আমরা যারা বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক গবেষণা করি, তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বিশেষত, গত তিন দশক ধরে দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করা মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির ওপর দুর্যোগের যে প্রভাব ও তার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমার গবেষণায় বাংলাদেশ সরকারের গত ১০ বছর ধরে নেওয়া বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের চিত্র উঠে আসে। এর একটি হচ্ছে, দুর্যোগে নারীর নাজুকতা ও অবদান- যেটি মূলধারায় আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর বর্তমানে আমাদের দৃষ্টি বহুধাবিভক্ত ধরনের মানুষের ওপর (ইন্টারসেকশনালিটি), যেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের দুর্যোগ মোকাবিলার দিকে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে। তবে আরও অনেক ধরন রয়েছে- যেমন ট্রান্সজেন্ডার, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, পেশাজীবী ইত্যাদি।