বিশ্ব রকেটের গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রতিনিয়ত প্রতিটি সূচকের অগ্রগতি ঘটছে। ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজেরও অনেক পরিবর্তন এসেছে। নারী ঘরের বাইরে এসেছে। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে কর্মক্ষেত্রের সর্বত্র নিজ যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে! কিন্তু তাতে খুব উপকার হয়েছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। নারী ঘরের বাইরে এলেও ঘরের কাজ থেকে মুক্তি পায়নি। বরং বাইরে আসার ফলে অতিরিক্ত কাজের বোঝা মাথায় নিয়েছে। এতে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ক্ষেত্রে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, তা বলা যায় না। শুধু পুরুষতান্ত্রিকতার মেরুদণ্ডই শক্ত হয়েছে মাত্র। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি, নারী অধিকার, নারী-পুরুষ সাম্য নিয়ে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান। নারীর এই বিদ্রোহও কি পুরুষতান্ত্রিকতার বলয়ের বাইরে আসতে পেরেছে? বোধ করি নয়। অনেকে বিশ্বাস করে- ঐক্যের মধ্যে মুক্তি। তবে সেই ঐক্যের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে কিনা, কে বলতে পারে! বর্তমান বাস্তবতায় তা কল্পনা করাও কষ্টকর।
বাংলাদেশ দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। সেই যুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের পাশাপাশি দুই লাখ নারী সল্ফ্ভ্রম হারিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে সল্ফ্ভ্রম হারানো এ নারীদের নাম দেওয়া হয় বীরাঙ্গনা। লাঞ্ছিত নারীদের জন্য এ বীরাঙ্গনা নাম কতটা সুখকর হয়েছে, তা দেশের মানুষ দেখেছে ড. নীলিমা ইব্রাহিমের 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' বা ড. শেখ আব্দুস সালামের সংগৃহীত 'বীরাঙ্গনার আত্মকথন' বইয়ে। ড. নীলিমা ইব্রাহিম তো তিন খণ্ডে বইটি প্রকাশ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেও দ্বিতীয় খণ্ডের পর আর মানসিক চাপ নিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে নিজে থেকেই থেমে যান। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া বাড়ির নারীরা রাতদিন রান্না করে তাদের খাওয়ানোর বিপরীতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাদের হত্যা করা হয়েছে; পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি। প্রতিদান হিসেবে কিছু ব্যক্তি কয়েকটা টিন পেয়েছে কিংবা দুই হাজার টাকা। এর পর সবাই সব ভুলে গেছে।