পরিচয়ের অনেক আগে থেকেই আমি তার ভক্ত। আরেকটু ঘুরিয়ে বললে, যখন থেকে আমি তার ভক্ত, তখন তার নামও জানতাম না। শুধু আমি নই, আমাদের প্রজন্মের লাখো মানুষ তার ভক্ত। শুধু কাওসার আহমেদ চৌধুরী নন, পৃথিবীর সব গীতিকবিকেই কোনো না কোনো পর্যায়ে এই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়।
আমরা গান শুনি, গায়ককে চিনি, তার ভক্ত হই, কখনো কখনো সুরকারকে চিনে ফেলি। কিন্তু গানের যাত্রাটা যেখানে শুরু, সেই গীতিকারই থাকেন সবচেয়ে আড়ালে। আশির দশকে ফিডব্যাকের মাকসুদের কণ্ঠে, ‘মৌসুমী কারে ভালোবাসো তুমি…’ আমাদের সবারই জিজ্ঞাসা হয়ে উঠেছিল। তখন আমরা জানতামই, জিজ্ঞাসাটা আসলে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর।
নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর কণ্ঠে, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়…’ আমাদের বিরহী হৃদয়কেও ছুঁয়ে যেত। আসলে তখনো আমরা জানতাম না এই কান্না আসলে নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর নয়, কাওসার আহমেদ চৌধুরীর। ক্যাসেটের গায়ে গীতিকার, সুরকারের নাম লেখা থাকলেও আমরা তা মনে রাখতাম না, মনে রাখি না। গীতিকবিদের দুর্ভাগ্য এখানেই। কাব্য জগতে তারা ব্রাত্য, আবার গানের জগতে ব্যাকবেঞ্চার।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর। কত বছর বেঁচে ছিলেন, তারচেয়ে বড় কথা কেমনভাবে বেঁচে ছিলেন। কাওসার আহমেদ চৌধুরী অদ্ভুত এক ইচ্ছাজীবন যাপন করে গেছেন। তার হয়তো অনেক অর্থ-সম্পদ ছিল না। কিন্তু তার ভাণ্ডারে যে মানিক-রতন ছিল, তা কয়েক জীবন চেষ্টা করলেও অনেকে তা দেখা পাবে না।