বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা রোগীদের। অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগ এড়াতে এবং দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় বেসরকারিতেই ভিড় করেন সব শ্রেণির মানুষ। আর এতেই হয় সর্বনাশ। কারণ সেখানে একবার ঢুকলেই প্রতি মুহূর্তে বাড়তে থাকে বিলের অঙ্ক। এক্ষেত্রে ভর্তি, চিকিৎসক দেখানো, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আইসিইউ-সিসিইউ ফি ও ওষুধ কেনার খরচ টানতে টানতেই কেউ কেউ নিঃস্বও হচ্ছেন। এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ৪ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে-এমন পরিসংখ্যান সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে যে চিকিৎসক ১০ টাকার টিকিটে রোগী দেখছেন, তিনিই বিকালে বেসরকারিতে পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রোগ নির্ণয়ে কোনো কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারিতে প্রায় শতগুণ বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। এ ব্যাপারে জরুরি ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে-এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বিদ্যমান বেসরকারি চিকিৎসা সেবা আইন যুগোপযোগী করে যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তারা
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে শুধু হাসপাতাল ব্যবসা নয়, কোনো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ নেই, সেটারই প্রভাব পড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন এ খরচ থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব রয়েছে। এটি এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ২০৩২ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এজন্য ‘পয়েন্ট’ ধরে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বেসরকারি অংশীদারত্বের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেবাদানের কোয়ালিটিতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছেমতো সেবামূল্য নিচ্ছে। এটি বন্ধে সরকারকে প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি ভেদে চিকিৎসা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। বেসরকারি চিকিৎসা আইনকে যুগোপযোগী করে যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমবে।