‘...আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি। কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই, কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই ছুটি সব শিক্ষার্থীর কাছেই আনন্দের, মজার। তবে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি আনন্দের বদলে হতাশা, বিষণ্নতাসহ নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মহামারি করোনায় বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ছুটির এসব সমস্যা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। শুধু মানসিকই নয়, সামাজিকভাবেও নানা সমস্যায় পড়ছে বা অপকর্মে জড়াচ্ছে।
ভালো নেই শিক্ষকরাও। ঢাকার দোহারের ধীৎপুর শহীদ শাকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেখ আবদুস সালাম মিয়া দীর্ঘদিনের পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ‘কেমন আছেন’ জানতে চাওয়া মাত্র তিনি বিষণ্ন মুখে বলেন, ‘একটু শুয়ে আছি। স্কুল বন্ধ। কোনো কাজ নাই। কিছু ভালো লাগে না। স্কুল খোলা থাকলে শরীর-মন সবই ভালো থাকে।’ এ জবাবে সহজেই বোঝা যায়, মানসকিভাবে কতটা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন তিনি। সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করায় নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন। তারপরও ভালো নেই।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। আর টানা প্রায় দেড় বছর পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে স্কুল খোলা হয়। সপ্তাহে দু-তিন দিনের বেশি কোনো শ্রেণিতেই ক্লাস হয়নি। তাই স্কুল খুললেও সেটা যেন আগের মতো ঠিক জমে ওঠেনি। নতুন বছরে ক্লাস শুরু না হতেই আবারো করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের হানা। আবারো বন্ধ স্কুল। এতো বন্ধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ভালো নেই। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। মোটাদাগে হিসাব করলে অন্তত ১০ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত খোলা রাখা দরকার।