স্কুল-কলেজে বিষয় হিসেবে বাংলা কেন পড়ানো হয়, এই প্রশ্ন রেখেছিলাম অর্ধশতাধিক বাংলা শিক্ষকের কাছে। তাঁরা শিক্ষক প্রশিক্ষণে এসেছেন, আর আমি তাঁদের কাছে গিয়েছি নতুন বাংলা বইয়ের ধারণা দিতে। উত্তরে তাঁরা কী লিখবেন, তা আমার ধারণায় ছিল না। তাঁরা লিখেছেন, বাংলা পড়ানো হয়, কারণ বাংলা ভাষার জন্য আমাদের রাজপথে রক্ত দিতে হয়েছে কিংবা বাংলা পড়ানো হয়, কারণ সমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সংযোগ ঘটে এই বিষয়টির মাধ্যমে। তাঁরা এ–ও লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য বাংলা পড়া দরকার।
যত সহজ করে এই কথাগুলো আমি লিখলাম, তাঁদের লেখা কথাগুলো তত সহজ ছিল না। কঠিন ও কাব্যিক শব্দে ভরা দীর্ঘ বাক্যে লেখা তাঁদের কথাগুলো বুঝে নিতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বাক্য দীর্ঘ করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা কর্তা-ক্রিয়ার সমন্বয় রাখতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা উপযুক্ত শব্দ-প্রয়োগ করতে পারেননি। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলা পড়ার উদ্দেশ্য নিয়েও যথাযথ ধারণা দিতে পারেননি। ধারণা দিতে না পারার এই ব্যর্থতা শিক্ষকদের নয়। বরং দায় তাঁদের, যাঁরা কারিকুলাম প্রণয়ন করেন এবং পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনার কাজে জড়িত থাকেন।
এই সংবাদ এত দিনে সবার জানা হয়ে গেছে, ২০২৩ সালকে সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন বই লেখার কাজ চলছে। পরিবর্তিত কারিকুলাম অনুসারে নতুন বইগুলো তৈরি করা হচ্ছে। ক্লাসে পাঠদান পদ্ধতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। আশা করা যায়, এবার বাংলা বই পড়ে শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা অন্তত ঠিকমতো শিখতে পারবে। এত দিনে কাগজে-কলমে বড় বড় কথা বলা হয়েছে; এবার কার্যকরভাবে বাংলা বইয়ে তার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। যেমন প্রমিত ভাষায় শিক্ষার্থী কথা বলতে পারবে ও লিখতে পারবে, এত দিন এটাও অনেক লক্ষ্যের মধ্যে একটি ছিল। তবে এ জন্য না শ্রেণিতে কোনো কিছু করানো হতো, না পাঠ্যবইয়ে কিছু ছিল। এবার বাংলা বইয়ে প্রমিত উচ্চারণের ওপর কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারা একদিনের ব্যাপার নয়। তাই বইয়ের নানা জায়গায় প্রমিত উচ্চারণের নানা রকম অনুশীলন রয়েছে।