দেশের ২ বিপরীত প্রান্তের ২টি খবর। একটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাউফল উপজেলার, অন্যটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুলাউড়া উপজেলার। কিন্তু খবর ২টির মৌলিক চরিত্র প্রায় একই।
প্রথমটিতে স্থানীয় পৌর নির্বাচনে মুসলিম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রকাশ্যে হিন্দু প্রার্থীকে ভোট না দিতে এই মর্মে ফতোয়া জারি করেছে যে, 'হিন্দুদের ভোট দেওয়া হারাম। হিন্দুদের ভোট দিলে বেহেশত হারাম হয়ে যাবে এবং যারা হিন্দুদের ভোট দেবে তাদের নামাজ-রোজা হবে না।'
অন্যদিকে কুলাউড়ায় একজন মেয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ায় মসজিদভিত্তিক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানেরা ওই মেয়ের পরিবারকে একঘরে করার আদেশ দিয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, ভুক্তভোগী পরিবারের মেয়েটি নাকি উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকা গিয়ে সনাতন ধর্মের এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। এই অভিযোগ তুলে তার অশীতিপর বৃদ্ধ বাবাকে, যিনি নিজে হজ্ব করে এসেছেন, মসজিদ পঞ্চায়েতের সামনে ডেকে পাঠায়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে পঞ্চায়েতের সামনে হাজির না হতে পারলে তার অনুপস্থিতিতেই 'একঘরে' করার রায় প্রদান করে।
২টি ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসনের গোচরে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। তবে কুলাউড়ার নির্বাহী কর্মকর্তা নাকি উভয় পক্ষকে ডেকেছেন বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য!
ঘটনা ২টি এমন সময়ই ঘটলো যখন পুরো জাতি মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে আমাদের ভাষার মাস, সংস্কৃতির মাস, বাঙালির অহংকারের মাস ফেব্রুয়ারি। অন্তরে যাই থাকুক না কেন, এ কথা সুবিদিত যে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা একটু বেশি বেশি বাঙালি আর অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠি। সেটা আর কোথাও হোক বা না হোক অন্তত বক্তৃতা, বিবৃতি আর ফেসবুকে সেটা করি। সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে এমন ২টি ঘটনা বিদগ্ধজনদের কষ্টের কারণ হবে এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু তারপরও কিছু প্রশ্ন তো থেকেই যায়।