‘আমার তো ভিডিও নাই, আমি কি দ্রুত বিচার পাব?’ উক্তিটি হত্যাকাণ্ডের শিকার এক শিশু আবু সাঈদের অসহায় বাবার। উক্তির স্থান সিলেটের আদালতপাড়া। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর স্থানটি লোকে লোকারণ্য হয়েছিল রাজনকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় দেওয়াকে কেন্দ্র করে। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ভয়ংকরভাবে পিটিয়ে রাজনকে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করা হয় এবং ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে।
অনেকটা দ্রুততম সময়ে বিচার করে রাজন হত্যার রায় যেদিন হয়, ঠিক সেদিন ছেলে হত্যার বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতে গিয়েছিলেন আবু সাঈদের অসহায় বাবা। রাজন হত্যা মামলায় দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসির রায় হওয়ায় আদালতে মানুষের ‘ফাঁসি ফাঁসি...’ চিৎকারে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখে নিজের সন্তান হত্যার বিচার কবে হবে, আদৌ হবে কি না, সেটা নিয়ে আক্ষেপ হয় তাঁর। শুরুতে বলা উক্তিটি তখনই করেন তিনি প্রথম আলোর সাংবাদিকের কাছে। সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের এ এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি।
এ দেশে কোনো হত্যাকাণ্ড যদি ‘চাঞ্চল্যকর’ না হয়, তাহলে সেটার বিচারের ক্ষেত্রে কী হয়, তা জানেন দেশের নাগরিকেরা। তবে প্রশ্ন সেখানেই শেষ হয় না; চাঞ্চল্যকর হলেও কি এ দেশে হত্যা বা অন্য কোনো বীভৎস অপরাধের বিচার হয়?
টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুলকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে ধরে নেওয়া যায়। জনমনেও এমন ধারণা প্রবল। প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটা গল্প ফাঁদে, যাতে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি গুলি ছোড়ার পাল্টা হিসেবে তারা গুলি করে এবং তাতে বিশেষ এক মানুষ নিহত হয়।