খবরের কাগজগুলোতে ব্যাংকারদের জন্য দারুণ একটা খবর পড়লাম। এ খবরের বিষয়ে পড়ে আসছি। আগে দেখা যাক খবরটির শিরোনাম কী। একটি কাগজে ব্যাংকারদের ওপর আলোচ্য খবরটির শিরোনাম করা হয়েছে-‘ব্যাংকারদের পাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক’। আমার কাছে মনে হয়েছে, একেবারে জুতসই শিরোনাম। মানুষ কার পাশে দাঁড়ায়? দুস্থ, গরিব-দুঃখী, শীতার্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়-তাই নয় কি?
এ প্রেক্ষাপটে দেখলে বলা যায়, অসহায় বেসরকারি ব্যাংকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অসহায় বলছি কেন? বলছি, কারণ তারা নীরব কর্মী। এই করোনার মধ্যেও তারা জরুরি ডিউটি করেছেন কোনো প্রণোদনা ছাড়াই। তাদের ছুটিছাটা বলতে কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে শুক্র, শনিবারও তাদের কাজ করতে হয়। অফিসের সময়ের কোনো সীমা নেই। অনেক সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা। মাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক হিসাব ‘ক্লোজিং’য়ের সময় তো রাত ১২টা-১টা। এমন পরিশ্রমী একটা গোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ দেখার কেউ নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যস্ত মনিটরিংয়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুখ-দুঃখ দেখার সময় কোথায়? বরং তারা সব বদনামের ভাগীদার। ব্যাংকের বদনামের কোনো অন্ত নেই। এক সময় ব্যাংকাররা ছিল মানুষের কাছে সবচেয়ে বিশ্বাসের পাত্র, নির্ভরযোগ্য। তাদের কাছে পরামর্শ নিত। তাদের সততা ও নিষ্ঠা ছিল তুলনাহীন। আজকের দিনে তা অনেকটই ম্লান। অথচ তাদেরও অনেক সুখ-দুঃখ আছে, যা বলা দরকার। বলবে কীভাবে? তাদের কি কোনো ‘প্ল্যাটফরম’ আছে? না, নেই।
বিসিএস (প্রশাসন), পুলিশ, কর কর্মকর্তা, ডাক্তার, উকিল সবারই সংগঠন আছে। এসব সংগঠন তাদের সুখ-দুঃখ দেখে। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করে। আবার পেশার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও পালন করে। এমনকি এক ‘ট্যাংকার’ থেকে অন্য ট্যাংকারে পেট্রল, ডিজেল তোলার সময় কতটুকু বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তা মাপার কর্মীদেরও সংগঠন আছে সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য। অসহায় ব্যাংকারদের তা নেই। তারা অসংগঠিত। তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য কোনো সংগঠন নেই, নেই কোনো ট্রেড ইউনিয়ন (সরকারি ব্যাংক বাদে)। অথচ তারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা কর্মসূচির অধীনে রয়েছে বিরাট অর্থায়ন কর্মসূচি। অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ, ঋণপত্র খোলা, প্রকল্প অনুমোদন, যাচাই-বাছাই। সেই সঙ্গে আবার টাকা আদায়ের দুশ্চিন্তা। যে ‘ব্যাংক-ফান্ডে’ দেশের শিল্পায়ন এবং আজকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, যে ব্যাংকারদের সহযোগিতায় হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে, তারা দৃশ্যত অসহায়। অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আসার কারণ আছে।
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবার স্বার্থই দেখেছে। ব্যাংক মালিকদের স্বার্থ দেখেছে, ব্যবসায়ী ও বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেছে, ঋণ গ্রহীতাদের স্বার্থ দেখেছে। দেখেছে ঋণখেলাপিদেরও স্বার্থ। রুগ্ণ শিল্পের স্বার্থ, পাটশিল্প ও চামড়াশিল্পের স্বার্থ তারা দেখেছে। দেখেছে তাদের নিজেদের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের স্বার্থ। এমনকি বরখাস্তকৃত কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও তারা পুনর্বহাল করেছে চাকরিতে। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্যদেরও চাকরির ক্ষেত্রে অনুকূল দৃষ্টিতে দেখা হয়।