মাত্র কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে নৃশংসভাবে হত্যার রেশ না কাটতেই একজন অভিনেত্রীকে একইভাবে হত্যা করা হয়। লাশ দুই টুকরা করে ঢাকার কাছে এক ব্রিজের নিচে ফেলে রাখা হয়। প্রথম হত্যাকাণ্ডে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এবং বাসা তৈরির কাজে নিয়োজিত কাঠমিস্ত্রি শিক্ষিকার হাতে থাকা টাকা জোর করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁকে হত্যা করে পাশের ঝোপে ফেলে রাখেন। সামান্য কিছু টাকার জন্য একজন শিক্ষিত মানুষকে হত্যা করতে একটুও বুক কাপল না হত্যাকারীর।
অভিযোগ উঠেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাঠমিস্ত্রি মাদকাসক্ত ছিলেন এবং ঠিক একই কারণে তাঁর প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। আর অভিনেত্রীকে হত্যার দায়ে এরই মধ্যে তাঁর স্বামী ও তাঁর এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ কিছু আলামতও সংগ্রহ করেছে। এখানেও অভিযোগের তীর মাদকের দিকে। নিহতের এক আত্মীয়র দাবি, নিহতের স্বামী মাদকাসক্ত ছিলেন এবং স্ত্রীকে মারধর করতেন। অবশ্য অভিনেত্রীর স্বামী স্বীকার করেছেন দীর্ঘদিনের দাম্পত্য কলহের জেরে তাঁকে হত্যা করেছেন।
দুটি ঘটনায় মাদকাসক্তের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আমাদের বলে দেয় নৃশংসতার সঙ্গে মাদকের সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের হয়তো মনে আছে, কয়েক বছর আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে কুড়িল বিশ্বরোড়ের কাছে এক মাদকাসক্ত ধর্ষণ করেছিলেন। ঘটনাটি আমাদের দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। কী এক নৃশংস সমাজে আমরা বসবাস করছি যেখানে তুচ্ছ ঘটনা, সামান্য কিছু টাকা, রাগের বসে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ, মতের অমিলে আমরা একজন অন্যজনকে হত্যা করছি। যাঁরা এ কাজ করছেন তাঁদের অতীতে কোনো অপরাধের রেকর্ডও হয়তো নেই, কিন্তু তাঁদের মধ্যে হত্যা করার মতো কি মনস্তত্ত্ব কাজ করছে। অপরাধ করার পর শাস্তির পরিণতিও কী তাঁদের জানা নেই। কোনো কিছুর বাছ-বিচার নেই, কাজ শুধু নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিকৃত মনোবৃত্তি চরিতার্থ করা। আমাদের কাছে এ প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন সমাজে নৃশংস হত্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং কিভাবে আমরা এমন হত্যাকাণ্ড কমাতে পারি। সমাজকে নিয়ে যাঁরা ভাবেন তাঁদের মতামত দিতে হবে, আইন প্রণেতার চিন্তা করতে হবে আইনের কোনো ঘাটতি আছে কি না, আইন বাস্তবায়নকারীদের সজাগ থাকতে হবে তাঁদের কোনো দুর্বলতার কারণে নৃশংসতা বাড়ছে কি না। সমাজে বসবাসরত প্রতিটি পরিবারের সদস্যদেরও ভাবতে হবে তাদের কারণে সমাজে নৃশংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না। দায় আমাদের সবার, তবে কারো বেশি এবং কারো হয়তো কম।