‘তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।’ ইয়াহিয়া খানের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ৭ মার্চের ভাষণে। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশেও বলতে হয়, ‘আপনি শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে এলেন না, শুনলেন ভিসি ও তাঁর পক্ষের লোকদের কথা।’
যাঁরা রাজনীতি করেন, যাঁদের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সামান্যমাত্র ধারণা আছে, তাঁরা জানেন, আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে মন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে চারদেয়ালের মধ্যে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় ভরসা পাবেন না। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও এ রকম বৈঠক হয়েছিল। তাতে কোনো ফল আসেনি। আলোচনার নামে আপসের চাপ দেওয়ার এই সব বৈঠকে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকে না। এত সব জেনেও কেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তাঁদের ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ করলেন? উদ্দেশ্যটা কি লোকদেখানো ছিল?
আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয়রাও ছিলেন। হাতে স্যালাইন নিয়ে মুমূর্ষু শরীর নিয়ে তাঁদের উচিত ছিল অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আসা? শিক্ষামন্ত্রী কি এটাই প্রত্যাশা করেছিলেন? মনে রাখা দরকার ছিল, আন্দোলনের নৈতিক ভরকেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে চলে গেছে অনশনকারীদের কাছে, বিশেষ করে যাঁরা বেশি ত্যাগ স্বীকার করছেন, যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের কাছে। যাঁরা ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন, ভীতিকর সাউন্ড গ্রেনেড হামলা মোকাবিলা করে টিকে থেকেছেন, তাঁদের মনোবল পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে, তাঁদের আবেগ সারা দেশের তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। তাঁদের এভাবে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে ৪৬ মাসে ১৪৯ বার বিদেশে গেছেন। দেশের বাইরে থেকেছেন ৪৫২ দিন। এ রকম গতিশীল মানুষ হয়েও ঢাকা থেকে আধঘণ্টার বিমানযাত্রায় তিনি সিলেটে যেতে পারলেন না! ঢাকায় গাড়ি করে অফিসে যেতেও তো এর চেয়ে বেশি সময় লাগে না। শিক্ষামন্ত্রী তো অভিভাবক ও মা-ও বটেন। অভিভাবক হিসেবে কিছুটা দরদ তো আমরণ অনশনকারী ‘বাচ্চারা’ পেতে পারতেন। সরকারের প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্তারা দিনকে দিন অমানবিক হয়ে পড়ছেন। এই ঘটনা তার আরেকটা উদাহরণ হয়ে থাকল।
আরও খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকল ৩৪ জন উপাচার্যের বিবৃতি। সংবাদপত্রের খবর জানাচ্ছে যে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনকে পদত্যাগ করতে হলে তাঁরাও একযোগে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এতে বরং খুশিই হতেন। তাঁদের আর আন্দোলন করতে হলো না বলে। এই উপাচার্যদের কারও কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইউজিসি গত কয়েক বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন উপাচার্যের দুর্নীতির তদন্ত করেছিল।