নির্বাচন হলো অবাধ বাছাইপ্রক্রিয়া, যাতে ভোটাররা তাঁদের পছন্দসই প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন। এটাই সারা বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত রীতি। কিন্তু কে এম নূরুল হুদা কমিশন গত পাঁচ বছরে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে যে নির্বাচনটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মেয়াদ শেষে তারা তফসিল ঘোষণা করেছে, প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, সেই মনোনয়নপত্র বাছাই হওয়ার পর যে যাঁর মতো প্রচারও করেছেন। ভোটের দিন নির্ধারিত সময়ের পর কমিশন সাড়ম্বরে ফলও ঘোষণা করেছে। কাউকে জিতিয়ে দিয়েছে, কাউকে হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকার নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে খুঁজতে অনেক দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ‘নিখোঁজ সংবাদ’ প্রকাশ করেছে।
এই যে পাঁচ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলো, তাতে কতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তার হিসাব নিলেই নূরুল হুদা কমিশনের নির্বাচনের স্বরূপ জানা যাবে। নির্বাচন কমিশন দাবি করতে পারে যে তাদের মেয়াদে অনেক নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন। সেটি তাদের বদান্যতার কারণে নয়। এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারি দল যেসব প্রার্থী দিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। তাই বিরোধী দলের প্রার্থী জয়ী হওয়া মানে সুষ্ঠু নির্বাচন নয়। যদি আমরা তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে সিলেট, রংপুর, কুমিল্লা প্রভৃতি সিটি করপোরেশন নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে এবং বিরোধী দলের প্রার্থীরা জিতেছেন। এতে নির্বাচন কমিশনের বাহাদুরি দেখানোর কিছু আছে বলে মনে হয় না। সেখানকার ভোটারদের সচেতনতার কারণে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ‘দিনকে রাত’ করতে পারেননি। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী হয়েছে, তা সবার জানা। কোনো কোনো সিটি করপোরেশনে দুপুর ১২টায়ই বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জবরদখলের প্রতিবাদে। নির্বাচন কমিশন বরাবর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। তাঁরা বলেন, সংঘাতের দায়িত্ব তাঁদের নয়। ভোট কারচুপির দায়িত্ব তাঁদের নয়। এরই নাম স্বাধীন নির্বাচন কমিশন!
সৌভাগ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সে রকম কিছু হয়নি। এর কারণ তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতা। প্রার্থী সরকারি না বিরোধী দলের, ভোটাররা সেটি খুব পার্থক্য করেননি। প্রার্থীর যোগ্যতা ও ভাবমূর্তিই এখানে মূলত জয়–পরাজয় নির্ধারণ করেছে।