শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীদের তাঁদের হল প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের কাছে দাবি ও আবদারগুলো কি অযৌক্তিক কিছু ছিল? ভেবে দেখেছেন কি, একজন, দুজন বা এক কক্ষের শিক্ষার্থীদের সেই দাবিগুলো কেন হলের সব শিক্ষার্থীর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের বিষয় হয়ে উঠল? সেই বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কেন সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিণত হলো? কেনই-বা সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করল? কেন উপাচার্য অবরুদ্ধ হলেন এবং তাঁকে উদ্ধারে আসা পুলিশ কেন লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ল? অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করতে হলো?
এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো পরপর সাজালে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকাঠামো এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের বাজে অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা পাওয়া যায়। পড়াশোনার পরিবেশ তো দূরে থাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় সুষম খাদ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক ও অপরিহার্য সেবা কতটা নিশ্চিত করা গেছে? বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ নিয়ে তাঁদের হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন, সেটার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। শিক্ষার্থীরা কথায় কথায় খারাপ ব্যবহার ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের তিন দফা দাবি তোলেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, হলে থেকেছেন, তাঁদের অজানা নয়, শিক্ষার্থীরা কতটা মামুলি সমস্যা নিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে যান। যেগুলোর বেশির ভাগই খুব সহজেই সমাধানযোগ্য। আবার কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেকেলে আইন-বিধির কারণে পূরণ করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে বুঝিয়ে বললেই তো সেটা সেখানেই সমাধান করা যায়। কিন্তু এর বদলে রূঢ় ব্যবহার, খবরদারি, কর্তৃত্ব, বকাঝকা, তির্যক বাক্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে না চাওয়া—এসব আচরণের মুখোমুখি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের হতে হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের অযৌক্তিক আচরণই তাঁদের ভেতরে ক্ষোভের জন্ম দেয়। আবার শিক্ষার্থীরা যখন দেখেন ওই শিক্ষককেরাই ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ আচরণ করছেন, তখন সেই ক্ষোভ বহুগুণ বেড়ে যায়।