প্রথম আলোতে গত ২৬ ডিসেম্বর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হায়দার আকবর খান রনো মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁর বিশ্বজনীন, মানবতাবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদবিরোধী আদর্শকে যাঁরা ধারণ করেন, তাঁদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। রনো তাঁর মন্তব্যে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মাওলানা ভাসানীর রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘মাওলানা ভাসানী সেই সময়টাতে যে অবস্থান নিয়েছেন, সেটা সমর্থন করা যায় না। আমি একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। তিনি বুঝতে পেরে বললেন, তুমি তো কমিউনিস্ট। আমার থেকে শত হাত দূরে থাকো। আমি এখন যে রাজনীতি করব তার সঙ্গে তোমাদের রাজনীতি মিলবে না। কমিউনিজম ও কমিউনালিজম একসঙ্গে চলে না। আমি এখন একটু কমিউনালিজম করব। এটা দরকার আছে।’
মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে রনোর এ মন্তব্য এর আগে তিনি ‘মাওলানা ভাসানী: নিপীড়িত জনতার নেতা’ শীর্ষক নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মাওলানা ভাসানী পরিষদ নিউইয়র্কের পক্ষ থেকে ওই নিবন্ধ আমি সম্পাদনা করছিলাম। এখানে রনোর সেই লেখাটি উদ্ধৃত করা হলো:
‘ভাসানী ছিলেন চিরসংগ্রামী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাঁর কণ্ঠ থেমে যায়নি। শাসক দল আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠস্বর ছিলেন। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও তিনি অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন, লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা বিপদাপন্ন হতে পারে। যাই হোক, আমিসহ আরও কেউ কেউ তাঁর ভারতবিরোধী অবস্থান পছন্দ করতাম না। আমার কাছে মনে হতো তাঁর ভারতবিরোধী অবস্থান সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুক্ত। সারা জীবন ধরে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়েছেন এমন একজন মানুষের কাছ থেকে সাম্প্রদায়িক অবস্থান আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সে কারণে তিনি যখন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সে সময়ে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আমি তাঁকে তাঁর ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি যা করছি সেটা আমার একটা কৌশল। আমি যা করছি সেটা আমাকে করতে দাও। কিন্তু তুমি ও অন্যরা আমার থেকে বহু দূরে থাকো।’