মুসলিম নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ রচিত হয়েছিল আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে। যখন মেয়েরা অন্তঃপুরের বাইরেই বের হতে পারতেন না, তখন বেগম রোকেয়া তাঁর কল্পনার চরিত্র সুলতানার স্বপ্নে এক স্বপ্নরাজ্য বা ইউটোপিয়ার জন্ম দিয়েছিলেন, যে রাজ্য সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় নারীদের দ্বারা। সেই রাজ্যে আমরা দেখেছি নারী ও পুরুষের প্রথাগত ভূমিকার পরিবর্তন। নারীরা হলেন সেই রাজ্যের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চালিকা শক্তি, যারা দেশ শাসন থেকে শুরু করে অনেক কিছু করেন। আর পুরুষেরা প্রায় গৃহবন্দী, অন্তঃপুরের কাজে নিবেদিত। নারীদের জন্য সম্পূর্ণ বৈরী এক সময়ে বাস করে কল্পনায় কী অব্যর্থভাবে তিনি তিরবিদ্ধ করেছিলেন সমাজে নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল সমস্যাকে।
তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘পুরুষেরা, যাহারা নানা প্রকার দুষ্টামি করে, বা অন্তত করিতে সক্ষম, তাহারা দিব্য স্বাধীনতা ভোগ করে, আর নিরীহ কোমলাঙ্গী অবলারা বন্দিনী থাকে। আপনারা কিরূপে তাহাদিগকে মুক্তি দিয়া নিশ্চিন্ত থাকেন?’ ১০০ বছর পার হলেও বেগম রোকেয়ার সেই অমূল্য প্রশ্ন উপেক্ষিত রয়ে যায়। তাই তো অপরাধের শিকার হয়ে কিংবা শিকার হওয়ার ভয়ে নারীরা খাঁচার মধ্যে বন্দী থাকেন আর ১৬ মামলার দাগি আসামি কারাগারের বাইরে ঘুরে বেড়ায়, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্রভাবশালী প্ররোচনাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়, নারীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া মুরাদ হাসানদের আইনের আওতায় আনা হয় না। এমনকি চাইলে তাঁরা বিনা বাধায় বিমানবন্দরের সীমানা পর্যন্ত পেরিয়ে যেতে পারেন।