উনিশ'শএকাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রণাঙ্গনের পাশাপাশি প্রচার মাধ্যম, বিশেষ করে সংবাদপত্রও যুদ্ধকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ-চলাকালীন নয় মাস সবগুলো সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণ ছিল পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাতে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না।
পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকায় অভিযান চালানোর সময় থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের আগ পর্যন্ত যুদ্ধের কোন প্রতিফলন সংবাদপত্রে উঠে আসেনি। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ ছিল , সেটি উঠে আসে বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এবং ভারতীয় সংবাদপত্রে।
মার্চের মাসের প্রথম তিন সপ্তাহ
উনিশ'শএকাত্তর সালের ১লামার্চ থেকে শুরু করে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য প্রাধান্য পেয়েছে। পাকিস্তান সরকারের প্রতি শেখ মুজিবের আল্টিমেটাম, ৭ই মার্চের জনসভা এবং মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনার নানা খুঁটিনাটি প্রকাশিত হতো সংবাদপত্রে। এক অর্থে বলা যায়, সংবাদপত্রগুলো ছিল বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে বেশ উচ্চকণ্ঠ।
সাতই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেবার পরদিন সবগুলো পত্রিকায় সে খবর প্রাধান্য পায়। দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ৮ই মার্চ শিরোনাম ছিল " এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।" সে সমাবেশের নানা খবরা খবর এবং ছবি ছাপা হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে।
এরপর থেকে শেখ মুজিবের সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আলোচনার খবর প্রকাশিত হয়। সেখানেও শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য ফলাও করে প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রগুলো। বাইশে মার্চ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে শিরোনাম করা হয় - আন্দোলন শিথিল হইবে না: মুজিব।