চুল নিয়ে অবশ্য বাঙালির মাতামাতির অন্ত নেই। প্রধান দুই কবি রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুলের চুল ছিল দেখার মতো। জীবনানন্দ দাশ তো তাঁর কবিতায় চুলকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়- ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা!’
দেবদাসকে নিয়ে মানুষ যেমন বলে-পার্বতী ভালো, চন্দ্রমুখী আরও ভালো! ঠিক তেমনি টাক মাথা ভালো নাকি ন্যাড়া মাথা ভালো? নাকি মাথা ভর্তি চুল থাকাটাই সবচেয়ে ভালো?
আসলে চুল যার যায়, সেই বোঝে 'ছাদখালি'র বেদনা! ন্যাড়া মাথা বা 'টাকলা' শব্দটা ইদানিং গুরুত্ব পেয়েছে অর্ন্তজাল (ইন্টারনেট) এক পেইজের জন্য যার নাম 'মুরাদ টাকলা'। এই পেইজ থেকে আগে বানান ভুলে ভরা পোস্ট দেওয়া হতো, বাংলা কথাটা লেখা হতো নাকি ইংরেজিতে! পরে দেশের এক মন্ত্রীর কল্যাণে পেইজটার নাম আবারো আলোচনায় আসে। এই মন্ত্রী ২০২১ এর ডিসেম্বরে 'নভেম্বর রেইন' এর পরিবর্তে 'ডিসেম্বর স্টর্ম' (নভেম্বর বৃষ্টির পরিবর্তে ডিসেম্বর ঝড়) চালু করতে যেয়ে নিজেই ঝড়ো হাওয়াতে হারিয়ে গেছেন। সমুদ্র উপকূল দিয়ে ভারতের দিকে বয়ে যাওয়া 'জাওয়াদ' (বহুদিন পর ছেলেদের নামে ঝড়) ঝড় 'মুরাদ টাকলা'র কল্যাণে 'মুরাদ' (এই আইডিয়াটা ধার করা) হয়ে গেছে বাংলাদেশে।
আসলে কোন নির্দিষ্ট টাকলাকে নিয়ে আজ আমরা ভাবতে বসিনি। কয়েক বছর ধরে এদেশের গণমাধ্যম একটা রোগে ভুগছে। রোগটার নাম কাব্য করে বলা যায় এভাবে-চোখে রাজার, ভালো সাজার, রোগ যে এলো দেশে! প্রধানমন্ত্রী রুষ্ঠ হওয়ার আগে পর্যন্ত এই মুরাদের বিরুদ্ধে কোন গণমাধ্যম তেমন কিছু বলে নি! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলার পর পরই সব মিডিয়া এটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে! কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হলে গণমাধ্যম আর গণমাধ্যম থাকে না। যেটা চুলে ভরা সেটা হয়ে যায় টাকলা, যেটা টাকলা সেটা ন্যাড়া করেও শেষমেষ রক্ষা পাওয়া যায় না। এরচেয়ে ভালো আবারো চুল, ন্যাড়া আর টাকলা নিয়ে ভাবা!