একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় একটি অসামান্য অর্জন। হাজার বছরের ইতিহাসে এর মধ্যে দিয়ে বাঙালি পেয়েছিল তার প্রথম স্বাধীন স্বদেশ আর প্রথম ভূমিপুত্র শাসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ জাতির ইতিহাসে কখনোই যেমন নিজেদের কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ইতিহাসের পাতায় অনুপস্থিত, তেমনি একইভাবে এদেশকে ইংরেজ, আরব আর হাবসি অনেকেই শাসন করে গেলেও, বাঙালি বরাবরই তার নিজের শাসকের অধীনে শাসিত হবার সুযোগ বঞ্চিত থেকেছে।
পাশাপাশি পৃথিবীর বুকে সম্ভবত একমাত্র এই জাতি রাষ্ট্রটির আবির্ভাব, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার মূল কনসেপ্টটিকেই নাল এন্ড ভয়েড করে দিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে ধর্ম নয় বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর অসাম্প্রদায়িকতার বন্ধনই একটি সফল রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। আর ঠিক এ কারণেই রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণের সব আয়োজন চূড়ান্ত করে রাখার প্রয়াস পাকিস্তানের ছিল বরাবরই, এখনও আছে, থাকবে ভবিষ্যতেও। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের ঠিক আগে আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশটাকে মেধাশূন্য করে দেয়া যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে দেশটা। মেধার সেই শূন্যতায় আজও ধুঁকছে বাংলাদেশ।