সত্তর সালের সেই প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের পরদিন অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর ঝড়জল মাথায় নিয়েই আমার মাকে নিয়ে তাঁর বাবা (আমাদের নানা) রওনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে। অনেকেই তখন অবাক হয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, মানুষের জীবন বাঁচে না, আর মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে সেসময় এমন তাগিদের কী অর্থ থাকতে পারে! কিন্তু, আমাদের দাদু তখন অপ্রতিরোধ্য। মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেই একটা দায়িত্ব শেষ হয় তাঁর। ঢাকা এসে মেয়েকে এপ্লাইড ফিজিক্সে স্নাতকোত্তরে পড়তে ভর্তি করে দিয়ে বলে গেলেন, এবার তোমার জীবন গড়ে নেওয়ার, নিজেকে দেখে শুনে রাখার সব দায়িত্ব তোমার।
তখন হবিগঞ্জ শহর থেকে ঢাকা আসতে দুই দফা রেলগাড়ি বদল করতে হয়। আর সেতো আর এযুগের মোবাইল ইমেইলের যুগ নয়। সত্যিকার অর্থেই মেয়েটির তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনও ঘর, পরিচয় বা আশ্রয় থাকে না। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ই তাকে গড়ে তোলে, বাড়িয়ে ধরে আর আগলে রাখে। আমি দেখি তাতেই নির্ধারিত হয় মায়ের ভবিষ্যৎ এমনকি আমাদের অর্থাৎ মায়ের উত্তর প্রজন্মের ভবিতব্যও।