হাসান আজিজুল হক (১৯৩৮-২০২১) দর্শনের ছাত্র। দর্শন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং দর্শন সম্পর্কে তাঁর রয়েছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। হাসানের সৃষ্টিশীল বিশাল সাহিত্যকর্মের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ। উদ্বাস্তু, নিরন্ন, শোষণ-বঞ্চনায় সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো হাসানের কথাসাহিত্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাঁর মানুষগুলো শুধু নিজেদের কথা বলে যায়। প্রেম-ভালোবাসা, আবেগ, উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা কিংবা উদাসীনতা—কোনো কিছুই মানুষগুলোকে স্পর্শ করে না। তারা কেবলই মানুষ। চিরায়ত জীবনধারায় সংসার করে চলে। বিয়ে, সন্তান, সংসার, চাষবাস। সব কিছুই স্বাভাবিক। কখনো কখনো ঔরসজাত সন্তানের শরীর একমাত্র আয়ের উৎস। সবই হাসানের সৃষ্টি। তিনি দেখেছেন গতরখাটা মানুষের জীবনসংগ্রাম অনেক দূর পর্যন্ত। বাংলা ভাগের পর বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর জীবনের ছন্দঃপতন ঘটে। জীবনের লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই। আত্মমর্যাদার লড়াই। ধর্মাশ্রিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে হাসানের বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখে না। হাসানের ‘দিবাস্বপ্ন’ গল্পে লম্বা জীবনের অধিকারী রহিম বখশ পাকিস্তানে রাতের দারুণ অন্ধকারে আসে। নতুন দেশে কিছু দেখতে পায় না। রহিম বকশের কেরানি সন্তান বাবার মনোভাব বোঝার মতো ক্ষমতা অর্জন করেনি। কেরানির দৃষ্টি দিয়ে ধর্মাশ্রিত পাকিস্তানের স্বরূপ উপলব্ধি করা কঠিন। রহিম বখশ উপলব্ধি করেছিলেন পাকিস্তান এক অন্ধকার রাষ্ট্রের নাম।