ইংরেজ আমলে রাষ্ট্র ছিল ঔপনিবেশিক ও আমলাতান্ত্রিক। এখন দুই দুইবার স্বাধীন হওয়ার পর সে হয়েছে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্তিক। আমলাতন্ত্র ঠিকই রয়েছে। ইংরেজ যে এ দেশকে শাসন করত, সে জন্য সর্বস্তরে তাকে নিজের দেশ থেকে লোক এনে বসাতে হয়নি; স্থানীয়দের দিয়েই কাজ চলেছে। আমলাতন্ত্রের একটি অনড় বেষ্টনী ছিল খাড়া করা, যার অভ্যন্তরে দুর্নীতি খুবই চলত। লুণ্ঠন যে যেভাবে পারে করার ব্যাপারে গাফিলতি করত না, কিন্তু কাঠামোটা ঠিকই থাকত। আমলারাই টিকিয়ে রাখত, তাদের সমষ্টিগত স্বার্থে।
সেই আমলাতন্ত্রের সদস্যরা কেউ কেউ রাজনীতি করেছেন, যেমন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুভাষ বোস; তবে আমলাতন্ত্রের সদস্য হিসেবে নয়, বাইরে বেরিয়ে এসে। কেউ কেউ সাহিত্যচর্চা করেছেন, যেমন বঙ্কিমচন্দ্র ও নবীন সেন। কেউবা অর্থনীতির বই লিখেছেন, যেমন রমেশচন্দ্র দত্ত। হ্যাঁ, তাদের প্রধান পরিচয় আমলাতন্ত্রী হিসেবে নয়, ব্যতিক্রম হিসেবেই। তবু সত্য তো থেকেই যায়। এরা সবাই আমলা হয়েছিলেন কিংবা হতে না পেরে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন (যেমন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়)। আমলাতন্ত্রের সদস্য হওয়ার চেয়ে বড় কোনো লক্ষ্য সে যুগে ছিল না।