একটা সময় ছিল, যখন সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের বাড়ির উঠানে পুথিপাঠের আসর বসত। ঝিঁঝি পোকা ডাকা সন্ধ্যায় নিভুনিভু প্রদীপের আলোয় গ্রামের সব বয়সি ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ শীতলপাটি বিছিয়ে এ আসরে বসে বিমুগ্ধ হয়ে শায়েরের শ্রুতিমধুর পুথিপাঠ শুনত। কালের বিবর্তনে তা আজ হারিয়ে গেছে। সেই সময়ে পুথিপাঠ শোনা জনসাধারণের কাছে অন্যতম বিনোদনের উত্স ছিল। সুর-তাল আর ছন্দের সূক্ষ্ম গাঁথুনিতে রচিত পুথিগুলো মানুষের মনে সুখের দোলা দিত। কখনো হাসির রোল, কখনো সবার চোখে কান্নার জল, কখনো-বা কল্পনা জগতের রোমাঞ্চ সবাইকে বিমোহিত করত। যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রেম কাহিনী, নবি-আওলিয়ার জীবনকাহিনী, ইসলামের ইতিহাস, লৌকিক পির পাচালি, শাস্ত্রকাব্য, কল্পকাহিনী, রাজবন্দনা পুথিসাহিত্যের মূল উপজীব্য ছিল। ইউসুফ জুলেখা, লাইলি মজনু, শিরি ফরহাদ, জঙ্গনামা, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামান সে সময়ের জনপ্রিয় পুথি বলে অধিক সমাদৃত ছিল।