মোটরসাইকেলটা কি আত্মহত্যা করল? পুলিশ তাকে চলতে বাধা দিয়েছে। একবার নয়, বারবার। বারবার বাধা পেয়ে তার প্রাণে যে আগুন জ্বলে উঠেছে, তাতেই সে পুড়ে মারা গেছে। তার মাত্র দুটি চাকা। এই দুটি চাকা দিনমান শহরের অলিগলি, সড়ক-জটিলতায় ঘুরে বেড়ায়। ক্লান্তি লাগলেও ঘোরে। সকাল থেকে রাত কেবলই ঘোরে। চাকা দুটি ঘুরলে একটি পরিবার খেতে পারে। পরিবারের শিশুটিকে তখন ক্ষুধাপেটে ঘুমাতে যেতে হয় না। আরেকটু বড় শিশুটার স্কুলে যাওয়া চলতে পারে। শিশুদের মা–বাবাও তো মানুষ। তাদেরও খেতে হয় এবং মোটামুটি সভ্য মানুষ হয়ে সামাজিক নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। মোটরসাইকেলটি ছিল তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মানুষ থাকার সহায়। এভাবে একটি পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরে ভারী আনন্দ হতো মোটরসাইকেলটির।
তার মালিকও তাকে খুবই কদর করত। তাকে রোজ পরিষ্কার করত। বাইরের লোককে দিয়ে ধোয়ালে অন্তত এক শ টাকা দিতে হয়। তাই মালিক নিজেই রোজ সকালে বাহনটির গা ধুইয়ে-মুছে চকচকে করে ফেলত। টাকাটা বেঁচে যেত। তারপর দুজনে একসঙ্গে পথে নামত। এখানে কে যে কার চালক বোঝা মুশকিল। বাইকটিকে চালকই চালান, কিন্তু চালকের জীবন চালায় ওই বাইক। বাইক না চললে যে খাওয়া জুটবে না! এভাবে দুজনে দুজনের হয়ে বিপদের দিন কোনোমতে পার করছিল।