ই-কমার্সে হায় হায় দায় কার?

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

দেশে বর্তমানে ৩০ হাজার ই-কমার্স বা অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০-১২টির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ইভ্যালি-কাণ্ডে এই খাতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। খাতটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। আস্থার সংকটের কারণে একদিকে অর্ডার কমছে, অন্যদিকে অগ্রিম পেমেন্টের সংখ্যাও কমেছে আবার ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে প্রভাবটা বেশি পড়েছে। নতুন গ্রাহক আসছে না। পুরনো গ্রাহকরাও সরে যাচ্ছে। অবস্থা অনেকটা শোচনীয়। কিন্তু এসবের দায় নিচ্ছে না কেউ। একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে করোনা মহামারির সময়ে ই-কমার্সের বিশাল উত্থান হয়েছে। এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫০-১০০ শতাংশ। কিন্তু ইভ্যালির মতো কয়েকটির কারণে ই-কমার্স খাত প্রায় ৫০ শতাংশ বাজার হারিয়েছে। গুছিয়ে উঠতে সময় লাগবে। সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে। পরিবেশ এমন হয়েছে যে, বর্তমানে পণ্য উৎপাদক, সাপ্লাইয়ার ও আমদানিকারকরা তাদের পণ্য বাকিতে দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে তারা জানান, এসবের দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। অবশ্য অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সরকার দায় এড়াতে পারে না। বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স উদ্যোক্তা ফাহিম মাসরুর বলেন, বিশাল প্রভাব পড়েছে ই-কমার্সে। ছোটদের ওপরে প্রভাবটা বেশি। নতুন গ্রাহক আসছে না। এই প্রবণতা এ খাতের জন্য শুভ নয়। অর্থাৎ খাতটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি জানান, সার্বিকভাবে ই-কমার্সে ২০-২৫ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে। অগ্রিম নিতে পারছেন না অনেকে। সাপ্লাইয়াররা এখন বাকিতে আমাদের পণ্য দিতে চান না। নগদ টাকা দিয়ে আমাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই খাতের। জানা গেছে, গাড়ি, মোটরসাইকেল, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন বিলাসী পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নজরে এসেছিল ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জের মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদের চটকদার ‘অফারের’ প্রলোভনে অনেকেই লাভের আশায় বিপুল অঙ্কের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি। অগ্রিম হিসেবে নেয়া তাদের টাকাও ফেরত আসেনি। এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধারদেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক। পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ইভ্যালি পণ্য নিয়েছিল তারাও প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা পাবে। সব মিলিয়ে প্রাথমিক তদন্তে ইভ্যালির দেনা ৯৫০ কোটি টাকারও বেশি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. রাসেল বিভিন্ন প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য ও আমাদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত তাদের দায়দেনার পরিমাণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা। তবে বাস্তব অবস্থা আরও খারাপ। ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল তাদের বলেছেন।পর্যালোচনা সভায় ই-কমার্স ব্যবসা বন্ধের প্রস্তাব: বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভা শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে কেউ কেউ ই-কমার্স ব্যবসা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ই-কমার্স বন্ধ করা যাবে না। ১০টি বা ১৫টি খারাপ কোম্পানির জন্য সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া সমাধান নয়। কারণ ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে লাখ লাখ উদ্যোক্তা এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবিকা খুঁজে পেয়েছেন। সেটি বন্ধ করা ঠিক হবে না। ই-কমার্স পরিচালনার জন্য পর্যালোচনা সভা থেকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ এসেছে বলেও জানান তিনি। তপন কান্তি ঘোষ জানান, ই-কমার্স ব্যবসাকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্য ই-কমার্স রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। ই-কমার্স পরিচালনার জন্য কোনো আইন নেই, নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং একটি ডিজিটাল কমার্স আইন করতে হবে।ই-কমার্সে প্রতারণার দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের: বুধবার অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ই-কমার্সে প্রতারণার জন্য প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান করার সময় কারও না কারও ছাড়পত্র নিয়েই করা হচ্ছে। এখানে ছাড়পত্র দিচ্ছে কমার্স মিনিস্ট্রি। তাদের প্রাইমারিলি দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্য যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তাদের সবারই আমি মনে করি দায়িত্ব নেয়া উচিত। ই-কমার্সে প্রতারণা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলবো না। মূলত কাজটি এখন আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা আছে, তারা এসব বিষয় নিয়ে আসে আমাদের এখানে। আইটির বিষয় আছে, সেখানে আইসিটি মিনিস্ট্রি আছে, তারাও দায়িত্ব নেবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মধ্যে তৈরি করে মানুষকে ঠকায়। এটা কিন্তু চলে আসছে। আগে যেভাবে হতো, সেটি এখন ভিন্ন আঙ্গিকে আসছে। আগে ম্যানুয়ালি করতো, এখন ইলেক্ট্রিক্যালি করছে। ডিজিটালাইজড ওয়েতে করা হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করে এখন, কতোদিকে নিয়ন্ত্রণ করবে? সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে অবশ্যই। সরকারই দায়িত্ব নেবে। সরকার দায়িত্ব এড়াবে কেন? ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জেলে নেয়া সমাধান নয়: বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জেলে নেয়াই সমাধান নয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যানকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হচ্ছে, এটা তো সমাধান নয়। গ্রাহকরা যেন তাদের টাকা ফেরত পান, আবার অভিযুক্তরাও যেন শাস্তি পান, উভয় বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সরকার। আমরা সার্বিক বিষয়গুলো অবজারভেশন করছি। আমরাসহ চার মন্ত্রণালয় (অর্থ, বাণিজ্য, আইন ও স্বরাষ্ট্র) বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। তাদের অবস্থান নির্ণয় করা হচ্ছে। টিপু মুনশি বলেন, দেশে বর্তমানে ৩০ হাজার অনলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০-১২টির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে অনলাইন প্রতিষ্ঠানকে খারাপ বলা যাবে না। এর আগে আমরা দেখেছি- ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ কাজে লাগানো হয়নি। সেগুলো অন্যরা ভোগদখলে রেখেছে। অথচ গ্রাহক তাদের পাওনা বুঝে পাননি। ইভ্যালির ক্ষেত্রেও যেন এমনটা না হয় সেজন্য গ্রাহকদের টাকা ফেরতের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। তিনি বলেন, অনেক বড় গ্রুপ অব কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নেতিবাচক এসব ঘটনার কারণে সরে দাঁড়িয়েছে তারা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us