ধরা যাক, সাম্যবাদের তকমা জড়ানো একজন মানুষ, যিনি যৌবনে অসংখ্যবার জেল আর নির্যাতনের শিকার, হাতকড়া লাগানো অবস্থাতেও স্লোগান দিয়েছেন বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক আর একইসঙ্গে পড়ুয়া হিসেবে বন্ধুজন ও পার্টি কমরেডদের কাছে সব সময়েই পেয়েছেন সমীহ, সেই মানুষ কবিতা ও কথাসাহিত্যের পাঠক হিসেবে কোন ধরনের বই পড়েন? একথা ঘুরেফিরে কখনো চারপাশে বাহিত হয়েছে বলে তোলা হচ্ছে না, এ নিয়ে সাহিত্যজগৎ কিংবা কখনো সে জগতের বাইরেও তো আলোচনা হয়। সেই আলোচনা কিছুক্ষণ পরে ঘুরেফিরে পার্টিসাহিত্য কিংবা বুর্জোয়াসাহিত্য এসব বাজারচলতির বুলির গালমন্দের ধরন হয়ে ওঠে। কিন্তু একজন পাঠক, তিনি কী পড়বেন আর কী পড়বেন না, এ বিষয়ে আর কেউ কোনো কথা বলার অধিকারী নন। এ তার একেবারে নিজের জগৎ। সেখানে বড়জোর অন্য কেউ নিজের ভালো-মন্দলাগা তাকে জানাতে পারেন, কিন্তু তাকে পড়তে বাধ্য নিশ্চয়ই করতে পারেন না। অনেকটা সেই উর্দু প্রবাদের মতন আপ রুচি খানা পর রুচি পরনা। পরনা অর্থ পরিধান। এখানে একটি বর্ণ বদলে দিলেইপড়না; নিজের রুচিতে পাঠ। ফলে, গায়ে তার যত সাম্যবাদের রাজনৈতিক গন্ধই থাকুক না কেন, এখানে পাঠক হিসেবে তার নিজস্ব জগৎ একেবারে ভিন্ন, কারোই প্রবেশাধিকার নেই। সেখানে তিনি ভীষণ স্বরাজ, আপন রাজ্যের রাজা। পাঠকের মনোজগৎ নিশ্চয় ভিন্ন অর্থে একান্ত রুচির প্রশ্নে অন্যতর সাম্যবাদী, সে রুচি তার খোরাক নিজের জন্যে বাছাই করে নেয়।