সংস্কৃতি প্রবহমান ধারা। এই প্রবাহের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কৃষ্টি-কালচার, রীতিনীতি, জীবনানুভূতি, কর্মস্রোতধারা, ধর্ম, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান। আর প্রবাহের ধারাকে বহমান রাখে সেখানকার শিল্প-সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, চিত্রকর্ম। এই নিয়ামকসমূহ মেলবন্ধন ঘটায় যুগের সঙ্গে যুগের, ফারাক কমিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে সভ্যতা থেকে সভ্যতায়। সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ও সঞ্জীবনী মাধ্যম হলো সংগীত। আর লোকসংগীত হলো সংগীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা। এই ধারা সমাজ-জীবনের সাধারণ পেশাজীবী বা গোষ্ঠীগত থেকে উচ্চবর্গীয় মানুষ, রাজমহল থেকে গ্রামীণ চাষাভুষা ঘরের মানুষ সকলের জীবনদর্শন ও জীবনভাবনাকে ধারণ করে সচকিতভাবে। লোকসংগীতকে কেবল গায়কের কথা, সুরের মাধুর্য বা একতারা, দোতারা, সারিন্দার মূর্ছনা দিয়ে বিচার করলে অন্যায় হবে। দৃশ্যত লোকসংগীতকে উপলব্ধি করতে হবে আরো গভীর থেকে। এই সংগীতের নেপথ্যে লুকিয়ে থাকে কোনো ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা জাতির দীর্ঘকালীন জীবনযাপনের চিত্র; উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, ব্যাপ্তি, সংস্কার ও বিশ্বাসবোধের ইতিহাস যা তাদের সংস্কৃতির মৌল বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয় আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক রূপভেদ। এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই তাকে অন্য সংগীত থেকে পৃথক করে দেয়। এক কথায় সমাজ-জীবনের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে লোকসংগীতে। লোকসংগীত হলো মাটির গীত, সুখ-দুঃখের গীত, জীবনবোধের গীত।