ভলতেয়ার বলেছিলেন, 'আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি।' শুধু বাংলাদেশ কেন, এ উপমহাদেশের কয়টি দেশ ভলতেয়ারের এই দর্শন থেকে কত দূরে অবস্থান করছে? উত্তরটা খুব জটিল নয়। গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকহীনতা। চিন্তাকে কি হত্যা করে যায়? হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়দের (এমন নাম আরও কতই তো বলা যাবে) হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের ইতিহাস মত প্রকাশের ইতিহাস, চিন্তা প্রকাশের ইতিহাস। মানুষকে হত্যা করা গেলেও তাই তার চিন্তা অমর থেকে যায়। এর অনেক দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে। রুশ লেখক বুলগাকভ বলেছেন, 'পাণ্ডুলিপি কখনোই পোড়ে না।' অনেক মানুষ আছেন, যাদের অক্ষরজ্ঞানই নেই কিন্তু চিন্তা-চেতনায় তারা অনেক বড় মাপের। আবার অনেক সার্টিফিকেটধারীই চরম মূর্খ কিংবা জ্ঞানপাপী। বিভিন্ন দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজে নিদারুণ এক ভয়ের অপসংস্কৃতি গ্রাস করে আছে। আফগানিস্তানের প্রগতিমনা মানুষ বিশেষ করে নারীদের অবস্থা দেখুন। ভারতে শিবসেনা কিংবা গেরুয়াধারীদের দেখুন। দৃষ্টান্ত আরও আছে। ওদের মনোজগৎ কী ভয়ংকর অন্ধকারে ঢাকা! ওরা আলো দেখে না, সামনে চলে না, অন্ধকার জগতে বসবাস করে, যায় পেছনে। চিন্তা ও জ্ঞানের স্বায়ত্তশাসন একই সঙ্গে সৃজনশীলতার সার্বভৌমত্ব ছাড়া সমাজের বিকাশ ঘটে কী করে! একাত্তর-পর্ব অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ অধ্যায় আমাদের এই দীক্ষায়ই দীক্ষিত করেছিল। বাহাত্তরের সংবিধানে এরই প্রতিফলন ঘটেছিল। কিন্তু আমরা কত বড় দুর্ভাগা জাতি, তা ধরে রাখতে পারলাম না। রাজনীতির নামে অপরাজনীতি অনেক অর্জনের বিসর্জন ঘটাল।