তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমার সাহিত্য-জীবন’ অশ্রু ও বারুদে ঠাসা। নামেই বইটির পরিচয়, এ প্রসঙ্গে বিস্তারে যাওয়া অপ্রয়োজনীয়, বরং তার অশ্রু আর বারুদ নিয়ে কয়েকটি কথা তোলা যেতে পারে। সব আত্মস্মৃতিতে কিছু অশ্রু থাকেই, সফলতমদের আত্মকথায় খানিক আত্মপ্রসাদও থাকে, এমনকি একদিন কাঁটাবিছানো যে সিঁড়ি তিনি মাড়িয়ে এসেছেন তা নিয়ে থাকে প্রচুর গর্ব আর উচ্ছ্বাস। বাংলা সাহিত্যে তারাশঙ্করের মতন ঔপন্যাসিকের সাহিত্যিক আত্মস্মৃতিতে সে উচ্ছ্বাস এবং তার কর্মবীরপনা কোথাও কোথাও থাকলে তা নিয়ে অবাক হওয়ারও কিছু থাকত না। কিন্তু এই লোকটি তো সজনীকান্তের ভাষায়, ‘বাংলা সাহিত্যে অনেক কথা এ-যুগের লেখকদের সকলের চেয়ে বেশি কথা বলতে এসেছে। এঁর পুুঁজি অনেক। এনেছে অনেক।’ নিয়ে হাজির; যখন সজনীকান্ত তারাশঙ্কর প্রসঙ্গে বলছেন একথা, তখনো তিনি দিশাহীন, কিন্তু কোথাও কারও প্রতি অনুযোগ নেই, নিজের কাজের ক্ষেত্রে পায়ের তলায় একটুখানি মাটি হাতড়ে দাঁড়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। ফলে, কারও প্রতি অনুযোগী হওয়ার চেয়ে নিজের কাছে ‘বীরের সদ্গতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই’ তার তখনকার একমাত্র ব্রত।