স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রতিদিন প্রচারিত হতো ৭ই মার্চের ভাষণ। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে অতিসংগত কারণেই এ দেশের সব মানুষের মতো আমার ওই ভাষণের কথা মনে পড়ে। সে ভাষণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা বা বাণী হচ্ছে—‘আমি দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমরা চাই আমাদের লোকদের অধিকার।’ লক্ষণীয় যে অলিখিত ওই ভাষণের মধ্যে এ অংশটুকু যখন তিনি বলেছিলেন তখন তাঁর সমস্ত দেহ, মন, অন্তরাত্মার সব কিছু থেকেই তা উচ্চারিত হয়েছিল। আসলেই শ্রেষ্ঠ ভাষণটির মধ্যে এই অংশটুকু বলার সময় আমাদের মহান নেতার সমস্ত অস্তিত্বই যেন ঝংকৃত ও বাঙময় হয়েছিল, তাঁর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা, তাঁর সব স্বপ্ন ও জীবনদর্শন উচ্চারিত হয়েছিল, ভাষা পেয়েছিল দেশ ও জাতির সব সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর সব ভালোবাসা ও হৃদয়মথিত প্রেম ও একাত্মতা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ কিংবা অন্য কোনো সুবিধা কী অধিকার এ দেশের জনগণের মানবাধিকার অর্জনের সংগ্রাম থেকে তাঁকে একবিন্দুও সরিয়ে আনতে পারেনি। পাকিস্তানিদের ছলচাতুরীর হাত থেকে আমাদের লাখো কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির দাবির কাছে ওসব ছিল তুচ্ছ। এখানে আমাদের লক্ষ করার বিষয় যে ওই কথামালার মধ্যে লুকিয়ে আছে গণতন্ত্রের মহামন্ত্র। তাই তিনি তাঁর প্রথমাংশে যখন বললেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব আমি চাই না’, তার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ তিনি দেশের সব মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনা ও অধিকারের পবিত্র সংগ্রামে সব মানুষের সঙ্গে নিজেকে শনাক্ত করেছেন, নিজে হয়েছেন কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে শনাক্ত। ‘আমি চাই না’ থেকে ‘আমরা চাই’—এ কথা গণতন্ত্রের কথা এই গণতান্ত্রিক চেতনা ও দর্শনের মহামন্ত্র। ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ ছিল তাঁর কথার প্রাণ।