স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম দিকে আমাদের পাশের গ্রাম দশশিকার প্রায় শ-খানেক বাড়ি পাকিস্তানি বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পাকিদের সেই ‘সামান্য ক্ষতি’র আতশবাজিতে অপূরণীয় বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে দুর্ভাগা এক মানবসন্তান অঙ্গারে পরিণত হয়। সেদিকে একবার তাকিয়ে যে বীভৎস দৃশ্য নজরে এসেছিল, তা দেখে সোজা বাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছিলাম; মনে হয়েছিল শিল্পাচার্য জয়নুল কয়লা দিয়ে দুর্ভিক্ষের যে ভয়ংকর চিত্র এঁকেছিলেন, পাকিদের কয়লায় গড়া মানব ভাস্কর্য তার চেয়ে শতগুণ ভয়ংকর। স্বাধীন বাংলাদেশে এই জাতীয় হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখতে হবে, তা ছিল কল্পনারও বাইরে। কিন্তু এখন তা হরহামেশাই দেখতে হচ্ছে; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় ২০ ঘণ্টাব্যাপী অগ্নিকা-ে ৫২ জনকে নির্জীব করা এই আদম সংহার-যজ্ঞের সর্বশেষ সংযোজন। শক্তিশালী পক্ষের লোভের আগুন দুর্বল প্রতিপক্ষকে পুড়িয়ে কয়লায় পরিণত করেছে। রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন ‘ভবনের পর ভবন ধসে পড়ছে লোভের ভারে, শাইলক এখন বাংলাদেশে আসন গেড়েছেন...।’