আজ থেকে শতবর্ষ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটা ইতিহাসের বিশেষ বাঁকবদলের ঘটনাও। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মূলত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর চার্লস বেইলির বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়। সংবর্ধনার আয়োজক ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ। ইতিহাস পাঠ থেকে আমরা জানতে পারি, কী বিশাল অবদান ছিল তৎকালীন মুসলিম সমাজের নেতৃবৃন্দের। তারপর ১৯১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ বাতিল হলে পূর্ববঙ্গের মুসলমান নেতাদের 'সান্ত্বনা' বা 'ক্ষতিপূরণ' দিতে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে সরকার। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন। ৩১ জানুয়ারি তার সঙ্গে পূর্ব বাংলার মুসলমান নেতাদের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নবাব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করে। নেতাদের মধ্যে ছিলেন নবাব সিরাজুল ইসলাম, আবুল কাশেম ফজলুল হক, নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ। তারা বড়লাটকে বিভিন্ন দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। তাতে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও ছিল। লর্ড হার্ডিঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যুক্তিসংগত দাবি মেনে নেন এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশমতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে ২৭ মে স্যার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। নাথান কমিটি যথাসময়ে তার প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে পেশ করলেও প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ থেমে থাকে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রধান প্রবক্তা সলিমুল্লাহ পরলোকগমন করেন। তবে তার অনুসারী ফজলুল হক, নওয়াব আলী প্রমুখ সরকারের কাছে অব্যাহতভাবে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে থাকেন। ১৯১৫ সালে ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী।