রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালের ২২ মে (মতান্তরে ১৭৭৪ সালের ২২ মে) হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সামাজিক পুনর্গঠন, ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ও ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। আমাদের সমাজে আধুনিক যুগ প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায় তাঁর অসাধারণ মনীষা ও কর্মশক্তির প্রভাব উপমহাদেশের ইতিহাসে চিরচিহ্নিত রেখে গেছেন। বহু বছরের সঞ্চিত জড়ত্বের শেষটুকু অপসারণপূর্বক মুক্তির আলো প্রজ্বলিত করে, অচলায়তনের অবরুদ্ধ বাতায়ন উন্মুক্ত করে বহির্বিশ্বের অবাধ হাওয়া তাঁর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন। প্রথম জীবনেই তিনি শিক্ষকের কাছে শাস্ত্র ও দর্শনের পাঠ গ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের জন্য সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন। ১৭৯১ সালে তিনি ও তাঁর ভাইয়েরা পৈতৃক জমিদারি দেখাশোনার ভার পান। ১৭৯৬ সালে তিনি পৈতৃকসূত্রে জমি, বাগান ও কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বাড়ির মালিকানা লাভ করেন। রামমোহন ১৮০৫ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। সিভিলিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে জন ডিগবির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। কালেক্টর জন ডিগবির দেওয়ান হিসেবে তিনি রংপুর কালেক্টরেটে কর্মরত ছিলেন। সেখানে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানার্জন করেন। জন ডিগবি ১৮১৫ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে তিনিও একই বছর চাকরি ছেড়ে কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সংস্কার প্রচেষ্টা শুরু করেন।