নারী নির্যাতনের বহুমাত্রিক চিত্র যখন আমাদের অধিকতর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, তখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বিস্মিত না করে পারে না। রাষ্ট্রীয় নীতিতে যদি নারীর প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি দায়িত্বশীলদের তরফে পুষ্ট করার নজির সৃষ্টি হয়, তাহলে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দাবি-অঙ্গীকার সংগতই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিকল্প ব্যবস্থা করার। তারা এ ব্যাপারে সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। এমন সুপারিশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক। সংসদ সদস্যরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ পাঠালেন কী করে? তারা ধর্মীয় নিয়ম আর রাষ্ট্রীয় নিয়মের সমদৃষ্টিভঙ্গিরইবা প্রকাশ ঘটালেন কী করে? প্রশ্ন হচ্ছে, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার লিঙ্গ পরিচয় বড় না তার পদের পরিচয় বড়? মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির দায়িত্বশীলরা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন, তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের বিপরীত। আওয়ামী লীগের নীতির সঙ্গেও এই সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান এবং স্বাধীনতা-উত্তর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই পরিপ্রেক্ষিতে নারীকে মর্যাদা দানের বিষয়টি ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। তা কি করে ভুলে গেলেন জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যরা?