সবার নজরে জি-৭

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-৭ এখন সবার নজরে। বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালে নেতৃস্থানীয় বিশ্বশক্তিসমূহের ভূমিকার প্রতি সবার মনোযোগ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এমনই পটভূমিতে জি-৭-এর মঞ্চ থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জোরালো বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।বিশ্বের অনুন্নত দেশের মানুষের কাছে করোনার প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০০ কোটি ডোজের ব্যবস্থা করবে জি-৭। এর মধ্যে শুধুমাত্র ৫০ কোটি ডোজ দেবে যুক্তরাষ্ট্র একাই। বৃটেন আপাতত ১০ কোটি ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। জি-৭ গোষ্ঠীর অন্য দেশগুলো বাকি ডোজের ব্যবস্থা করবে।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বৃটেনের টিকাকরণ প্রক্রিয়া খুবই সাফল্য পেয়েছে। তারই ফল হিসেবে আমরা আমাদের দেশের অতিরিক্ত প্রতিষেধক এমন দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে চাই, যারা এখনও পর্যন্ত করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এই অন্যতম অস্ত্র জোগাড় করে উঠতে পারেনি।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ‘এটা আসলে মানবতার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা। আমাদের শুধু দেখতে হবে কত বেশি সংখ্যক প্রাণ আমরা বাঁচাতে পারি।’জি-৭ এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো ‘গ্রুপ অব সেভেন’ বা সাতটি দেশের জোট। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির অধিকারী এই সাতটি দেশ হলো- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র।  এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই জোটের একটি অংশ। রাশিয়া ১৯৯৮ সালে এই জোটে যোগ দিলে এর নাম হয়েছিল জি-৮। কিন্তু ক্রিমিয়া দখল করার কারণে ২০১৪ সালে জোট থেকে রাশিয়া বাদ পড়ে। চীন বর্তমান বিশ্বে একটি বড় অর্থনীতি ও বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও কখনও জি-৭ জোটের সদস্য ছিল না। কারণ কোনও দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে দেশটিকে জোট ভুক্ত করা হয় না। ভারতকেও যে কারণে জি-৭ এর সদস্য করা হয় নি। তবে, চলতি ২০২১ সালের ১২-১৩ জুন বৃটেনের কর্নওয়ালে অনুষ্ঠিত জোটের সম্মেলনে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।জি-৭ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা সম্মেলন ছাড়াও সারা বছর ধরে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন, চুক্তি করেন এবং বৈশ্বিক ইস্যু ও ইভেন্টগুলোতে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন। এ বছরেও (২০২১) শীর্ষ সম্মেলনের আগে জি-৭ এর অর্থমন্ত্রীগণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে অধিক কর আদায়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এবারের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের প্রতি সবার নজর ও আগ্রহের কারণ হলো, এতে মূল আলোচ্যসূচি করা হয়েছে ‘কোভিড মোকাবেলা’। জি-৭ বলছে, ‘একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলেই সবাইকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মহামারি থেকে রক্ষা করা যাবে। এছাড়াও এজেন্ডার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাণিজ্য ইস্যু রয়েছে। বৃটেন-ইইউ বাণিজ্য বিরোধ কীভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, তা নিয়েও আলোচনার হবে। তবে জি-৭ এর সকল আলোচনাই হবে রুদ্ধদ্বার এবং শীর্ষ সম্মেলন শেষে বৃটেন আয়োজক দেশ হিসেবে ‘কমিউনিক’ নামে একটি নথি প্রকাশ করবেন, যাতে সম্মেলনে নেতারা কোন কোন বিষয়ে সম্মত হয়েছেন সে সংক্রান্ত একটি রূপরেখা থাকবে।আসলে জি-৭ কোনও আইন পাস করতে পারে না। কারণ এই জোট আলাদা আলাদা জাতি নিয়ে গঠিত, যাদের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে তাদের একমত হওয়া সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী প্রভাব থাকে। যেমন, জি-৭  বিগত ২০০২ সালে ম্যালেরিয়া ও এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী একটি তহবিল গঠন করেছিল, যার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর কর বিষয়ে সম্ভাব্য চুক্তির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী হবে।কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, করোনা মহামারি প্রতিরোধে এবং সবার জন্য ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে জি-৭ এর আগামী পদক্ষেপের বিষয়ে। কারণ, ইতিমধ্যেই ‘এই ভ্যাকসিন ধনীদের’ বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বে চলছে ‘ভ্যাকসিন পলিটিক্স’। টিকাকে হাতিয়ার করে চলছে ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’। কোনও কোনও দেশ উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করছে প্রতিষেধক হাতে থাকার ক্ষমতায়, যাকে বলা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম’। এরই মাঝে বিশ্বের নানা স্থানে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ভ্যাকসিন পোলারাইজেশন’র ফলে মেরুকরণ ঘটানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির ‘ক্ষমতার ভারসাম্যে’।শুরুতে করোনার কারণ নিয়ে চীনের সঙ্গে সদ্য-বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু করেছিলেন, সেটার ছায়া এখনও রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে যেমন স্নায়ুবিক যুদ্ধ চলছে, তেমনিভাবে কোন ভ্যাকসিন চলবে আর কে পাবে, তা নিয়েও অব্যাহত রয়েছে রাজনীতি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও সরগরম করছে পরিস্থিতি।বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নত, অগ্রসর ও নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব আছে। শুধু নিজের দেশই নয়, তাদেরকে বিশ্বশান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোও দেখতে হয়। যে কারণে জলবায়ু রক্ষায়, সংঘাত নিরসনে, শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় শক্তিশালী দেশগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। করোনা মোকাবেলায় এবং বিশ্বব্যাপী সর্বত্র ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতায় বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই ঐতিহাসিক মানবিক বিপর্যয়ে জি-৭ এর স্পষ্ট অবস্থান ও দৃঢ় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কেবল নিজেদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও জাতিগত ক্ষেত্রে সীমিত থাকার পরিস্থিতি এখন নয়। অতীতে বড় রাষ্ট্রগুলো বিশ্বব্যবস্থায় যে মানবিক, অগ্রসর ও সার্বজনীন ভূমিকা রেখেছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির সঙ্কুল পরিস্থিতিতেও তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।এখন দেখার বিষয় এটাই যে, বিশ্বশ্রেষ্ঠ আর্থিক শক্তিধর দেশগুলোর জোট জি-৭ বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর চরম বিপদের কালে কিরূপ আচরণ করে।লেখক: প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us