বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতি বছর কুড়ি হাজার মেয়েকে পাচার করা হয়। বর্ডারের গার্ডদের মাথাপিছু ৩০০/৪০০ টাকা দিলেই তারা বর্ডার পার করে দেয়। মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করা সহজ, মেয়েদের ভয় দেখানো সহজ, মেয়েদের ওপর গায়ের জোর খাটানও সহজ, বর্ডার পার করা সহজ, মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়াও সহজ। এই সহজ কাজটি এখন অনেকেরই উপার্জনের উৎস। একবার দুর্বার সংগঠনের তত্ত্বাবধানে কলকাতার সোনাগাছি পতিতালয় দেখতে গিয়েছিলাম আমি। দুর্বারের কাজ সোনাগাছির মেয়েদের অসুখ-বিসুখ সারানো, বাচ্চাদের ইস্কুলে দেওয়া, যৌনকর্ম যেন শ্রম হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায় সেই চেষ্টা করা। সেদিন সোনাগাছির মেয়েদের এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশে আমাকে কিছু বলতে বলা হয়েছিল। সবাই যা শুনতে আশা করেছিল, তা আমি বলিনি, কারণ আমি তা বিশ্বাস করি না। আমি বলিনি যে আপনাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হবে, আমি বলিনি যে আপনারা যে কাজটি করছেন, তা ভালো কাজ। আমি বলেছি, ‘আপনারা এখানে বাধ্য হয়ে এসেছেন, কেউ আপনাদের বিক্রি করে দিয়েছে, অথবা অভাবের তাড়নায় আর কোনও পথ খোলা নেই বলে এই পথে এসেছেন, পছন্দ করে এই পথে আসেননি, শ্রমিকের পরিচয় পাওয়ার চেয়ে পুনর্বাসন পাওয়াটা জরুরি, পতিতা প্রথাটির অবলুপ্তি হওয়া ভীষণই জরুরি।’ পুলিশ এবং দালালের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকের স্বীকৃতি চাই, এই যুক্তি খুব হাস্যকর। যেন শ্রমিকেরা কারো অত্যাচারের শিকার হয় না! আসলে শ্রমিকের স্বীকৃতি পেলে যৌনদাসীদের যন্ত্রণার অবসান হবে, এ মিথ্যে কথা। লাভ তাদের, যারা মেয়েদের যৌনদাসী বানায়, হাটবাজারে মেয়েদের কেনাবেচা করে।