বিদেশে মারা গেছে ২৭০০ বাংলাদেশি

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মরণঘাতী করোনা মহামারি তছনছ করে দিয়েছে কর্মের সন্ধানে বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশিদের জীবন। গত এক বছর এক মাসে কর্ম হারিয়েছেন কয়েক লাখ প্রবাসী। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন লক্ষাধিক। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ২৭শ’র অধিক প্রবাসী বাংলাদেশির। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন এবং প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করা দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের কাছে থাকা রিপোর্ট পর্যালোচনায় মোটামুটিভাবে এমন পরিসংখ্যানই মিলেছে। সংশ্লিষ্টদের রিপোর্ট মতে, বিশ্বের মোট ২৩টি দেশে বাংলাদেশি মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড হয়েছে। সেসব দেশে মারা গেছেন ২ হাজার ৭২৯ জন বাংলাদেশি। কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার কয়েক মাসে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান অধ্যুষিত নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি এবং মিশিগানে বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশন এবং কমিউনিটি সূত্রে ৪৪৫ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর পশ্চিমা দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন বৃটেনে। দেশটিতে  ৪১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড হয়েছে। ওই দুই দেশে বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে তাদের মৃত্যুর খবর চাউর হলেও সরকার ন্যাশনালিটি বা অরিজিন শনাক্ত করে কোনো রিপোর্ট প্রচার করেনি। তারা মোটা দাগে  (গ্রোসলি) তাদের নাগরিকদের মৃত্যু এবং শনাক্তের পরিসংখ্যান প্রচার করেছে। বাংলাদেশ মিশন বিভিন্নভাবে তা থেকে বাংলাদেশিদের আলাদা করে একটি ডাটাবেজ তৈরির চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ অবারিত এমন দেশসমূহে কত বাংলাদেশি অরিজিন করোনায় মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। তবে সব মিলে এ সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি বলে অনুমেয়। একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪৫, বৃটেনে ৪১২ ছাড়াও ইতালিতে ৩৫, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০, লেবাননে ১৫, কানাডায় ৯, সুইডেনে ৮, ফ্রান্সে ৭, স্পেনে ৭, বেলজিয়ামে ৩, পর্তুগালে ২ এবং ভারতে ১, মালদ্বীপে ১, কেনিয়ায় ১, লিবিয়ায় ১ এবং গাম্বিয়ায় ১ জন- মোট ৯৭৮ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। বৃটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশি এক কূটনীতিক বলছিলেন দেশটিতে মারা যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসানের মতে, ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। তারপরও দেশটিতে করোনায় অনেকে মারা গেছেন। করোনার মধ্যেই রোমে দায়িত্ব গ্রহণ করা মিস্টার আহসান বলছিলেন, প্রবাসী কর্মীদের চিকিৎসাসেবার বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বেশ ভালোভাবেই ম্যানেজ করছে। নাগরিকদের মতোই বিদেশিরা সেবা পেয়েছেন। তারপরও আনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেকে মারা গেছেন। বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ অবস্থায় নাগরিক এবং প্রবাসী কর্র্মীদের টিকা দেয়ার পাশাপাশি আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করছে ইতালির সরকার।মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশে মারা গেছেন ১৬৫১ বাংলাদেশি, সর্বোচ্চ মৃত্যু সৌদি আরবেমধ্যপ্রাচ্যসহ শ্রমঘন দেশ দেশসমূহ এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ সীমিত এমন সব দেশে যেসব বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করেছেন তার তথ্য বেশ ভালোভাবেই সমন্বয় করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী কর্মীদের সহযোগিতার জন্য সেগুনবাগিচায় ওই সেলটি গঠন করে। মূলত প্রবাসীদের চাকরির সুরক্ষা ও তাদের কল্যাণে কূটনৈতিক কার্যক্রম সমন্বয় করাই ওই সেলের কাজ। একইসঙ্গে ওই সেল বাংলাদেশে আটকে পড়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো এবং বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের লোকজনকে ফিরিয়ে আনার কাজও সমন্বয় করছে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের রিপোর্ট উদ্বৃত করে করোনা সেল বলছে, প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বছরজুড়ে যে রিপোর্ট জমা হয়েছে তাতে দেখা গেছে গত বছরের মার্চ থেকে চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৩ মাসে কেবল সৌদি আরবেই মারা গেছেন ১ হাজার ২শ’ ২৮ জন বাংলাদেশি। বিদেশে বাংলাদেশি মৃত্যুর পরিসংখ্যানে একক দেশ হিসাবে সৌদি আরবেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী সৌদিতে ১ হাজার ২২৮ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৬৫, কুয়েতে ১০৭, ওমানে ৭০, কাতারে ৩৫ ও বাহরাইনে ৩১ এবং জর্ডানে ১৫ বাংলাদেশি বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহানের ভাষ্য মতে, দেশটিতে আচমকা করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখন রাত্রীকালীন লকডাউন চলছে। আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা মিলেছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us