প্রায় দুশো বছর আগে ঢাকাই মসলিন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কাপড়। কিন্তু তার পর এটা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।
ঢাকায় এখনো জামদানি নামে মসলিনের শাড়ি তৈরি হয় বটে - কিন্তু তার সাথে দুশো বছর আগের ঢাকাই মসলিনের অনেক তফাত।
সেই মসলিন তৈরির পদ্ধতি ছিল একেবারে অন্যরকম - তাতে ব্যবহৃত হতো বিশেষ ধরনের তুলা - যা এখন আর পাওয়া যায় না।
মসলিন কি কেবলই কাপড়? এই বাংলাদেশের ঐতিহ্যের কথা বললে, ইতিহাসের কথা বললে মসলিনকে বাদ দেওয়ার কোনো উপায়ই যে নেই। তাই তো মসলিনের পুনর্জন্ম ঘটাতে ছয় বছর ধরে লেগে ছিলেন একদল গবেষক। অবশেষে তাঁরা সফলও হয়েছেন। কী বিচিত্র উপায়ে সংগ্রহ করা হলো মিহি মসলিনের উপাদানগুলো, তা একেকটা গল্পই বটে।
ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল লন্ডনে ১৮৫০ সালে। এর ১৭০ বছর পরে বাংলাদেশে আবার বোনা হলো সেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন কাপড়ের শাড়ি। ঠিক সে রকমই, যেমনটি বলা হতো—আংটির ভেতর দিয়ে গলে যায় আস্ত একটি শাড়ি। ইতিমধ্যেই ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বত্বের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২৮ ডিসেম্বর এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকাই মসলিন ও রাজশাহী সিল্ক পাচ্ছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি
এ মাসেই দুটো ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি আসছে বাংলাদেশের ঘরে। এর একটি পাচ্ছে ঢাকাই মসলিন, অপরটি রাজশাহী সিল্ক। আগামী ২৬ এপ্রিল বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই স্বীকৃতি পাওয়ার কথা রয়েছে পণ্য দুটির। এর আগে জামদানি, ইলিশ ও ক্ষীরশাপাত আম পেয়েছে এই অনন্য স্বীকৃতি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেশন উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মু. আবদুল হাকিম। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকাই মসলিনের নাম উচ্চারণ করলেই হাজারো মিথ ধরা পড়ে স্মৃতির পাতায়। কার্পাস তুলার সুতা থেকে তৈরি এই শাড়ি এতোটাই মিহি যে একটি আংটির ভেতর দিয়েও এপার ওপার করা যায়। আবার এ শাড়ি ভাঁজ করে রাখা যায় দিয়াশলাইয়ের বাকশেও।
নরম, পাতলা ও পরিধানে আরামদায়ক হওয়ায় অভিজাত নারীদের কাছে এ শাড়ির কদর ছিল বেশ। কথিত আছে সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন নূরজাহানের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিলেন, তখন ঢাকাই মসলিন উপহার দিয়েই নাকি সম্মতি মিলেছিল। জগৎখ্যাত এই শাড়ির বুনন ইংরেজি শাসনামলে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কেবল জাদুঘরে দেখে মনের আশ মেটাতে হয়েছে সবাইকে। কথিত আছে, মসলিন শিল্পীদের আঙুল কেটে দেওয়ার পরই নাকি ঢাকাই মসলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই মসলিন নানা পথ হেঁটে আবার ফিরেছে নিজঘরে।