ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ৫০ বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখনো আমার চেতনায়, আমার হৃদয় জুড়ে রয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার সেই দিনটি। ঘোষণা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন রেসকোর্স ময়দান থেকে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) এবং তা সরাসরি প্রচারিত হবে রেডিও ও টেলিভিশন থেকে। ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা সবাই প্রস্তুত হলাম ৭ই মার্চ সকাল থেকে। রেডিও-র পরিচালক জনাব আশরাফুজ্জামান খান আমাদেরকে ডেকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। বেতার ভবনে দায়িত্বে থাকবেন আশফাকুর রহমান খান ও বাহারাম উদ্দিন সিদ্দিকী, এবং জাহিদুল হক ডিউটি রুমে। রেসকোর্স মাঠে থাকবেন শামসুল আলম ও কাজী রফিক। এবং স্টেজে থাকবেন পরিচালক আশরাফুজ্জামান খান, সহকারী পরিচালক আহমেদ জামান খান এবং অনুষ্ঠান সংগঠক আমি নাসার আহমেদ চৌধুরী। ভাষণ সরাসরি প্রচার এর জন্য উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীরা। ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু হওয়ার মুহূর্তে বাহারাম উদ্দিন সিদ্দিকী আমাদেরকে টেলিফোনে জানালেন, পাক আর্মির মেজর সালেক জানিয়েছেন ভাষণ প্রচার করা যাবে না। ভাষণ প্রচার করা হলে বোমা মেরে রেডিও উড়িয়ে দেওয়া হবে। ততোক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভাষণ প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হলো। সারা দেশ তখন পাক আর্মির দখলে। এক টুকরো ছোট কাগজে লিখে বঙ্গবন্ধুর হাতে দেওয়া হলো আপনার ভাষণ পাক আর্মি প্রচার করতে দিচ্ছে না।
সারা দেশ সারা জাতি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। আমি তখন জীবনের পুরোপুরি ঝুঁকি নিয়ে আমার সঙ্গে নেওয়া ছোট উহার রেকর্ডারে লুকিয়ে সমস্ত ভাষণ রেকর্ড করে ফেললাম। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে রেডিও-টেলিভিশন অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করলেন এবং প্রস্তুত থাকতে বললেন। আমরা তার কথামতো সমস্ত ভিডিও প্রচার বন্ধ করে দিলাম এবং আমরা হাতিরপুলে কাজী রফিকের বাসায় আত্মগোপন করে রইলাম। রেডিও প্রচার বন্ধ হওয়ায় পাকিস্তানি সরকার এবং সেনাবাহিনী হতভম্ব হয়ে গেল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকলো না। যার ফলে সেনাবাহিনী রেডিও-র কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো।