‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ ছোটবেলায় গুরুজনদের কাছে এ কথা বহুবার শুনেছি। শুনে শুনে গর্ববোধ করেছি। কিন্তু একটু বড় হতে না হতেই মনে প্রশ্ন জাগা শুরু করে। মাছে-ভাতে যদি বাঙালি হয়, তাহলে এত ভিক্ষুক কেন? গ্রামে গ্রামে, বাড়িতে বাড়িতে গরিব মানুষের ভিড়, কাজের জন্য, দুটো ভাতের জন্য। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস, চৈত্র-বৈশাখে দ্বারে দ্বারে মানুষ ভিক্ষা করছে। চাল নয়, ভাতের মাড়ের জন্য। আরেকটু বড় হয়ে শুনেছি উত্তরবঙ্গের ‘মঙ্গার’ কথা, যেখানে ভিক্ষা করে দুমুঠো চাল মিলে না। মানুষের গায়ে জামা নেই, পায়ে জুতা নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, ছনের ঘর, মাটির ঘর। দারিদ্র্য দেখতে দেখতেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-১৯৭১ সাল। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, জাতির পিতার শতবর্ষ পালনকালে কী মনে হয়? এখন কি ভাতের অভাব আছে? ২০২০ সাল গেছে কর্মহীন অবস্থায়-করোনার আক্রমণ। মানুষ কি না খেয়ে মরেছে? না, তা হয়নি। এখন ভাতের অভাব নেই, নেই মাছেরও অভাব। মাছে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, চালে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাধীনতাপূর্বকালের তুলনায় চালের উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে। শাকসবজি, ফলমূলের অভাব নেই। ‘মঙ্গা’! ‘মঙ্গা’ শব্দ আমাদের কাছে এখন একটি অপরিচিত শব্দ। মানুষের গায়ে একটা জামা আছে, গেঞ্জি আছে। পায়ে জুতা আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এসব তথ্য কী বলে? বলে,আমাদের অর্জন বিশাল। মানুষ খেয়ে-পরে আছে-এত বিশাল খবর।