প্রত্যেক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এটি শিশুর প্রতি করুণা নয়, শিশুর অধিকার। জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদেও এর উল্লেখ বয়েছে। কিন্তু নানা কারণে আমাদের সমাজে এর ব্যত্যয় ঘটে। আদর-যতেœর অভাব, অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশ, সঠিক দিকনির্দেশনা ও বিদ্যমান পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিরূপ প্রভাবে অনেক শিশুকিশোর প্রত্যাশিত বিকাশ থেকে বিচ্যুত হয়। পারিবারিক পর্যায় থেকে শিশুর ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন না করলে একসময় তারা বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন ও মূল্যবোধের পরিপন্থি। এতে বিঘিœত হয় রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। সামাজিকভাবে তারা কিশোর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। শিশুদের কাছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সুস্থ ও মানবিক বোধসম্পন্ন করে তোলাও পরিবারের দায়িত্ব।
শিশুর বিকাশে পরিবার প্রথম ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। পরিবারের পরই সমাজ গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রাখে। একটি শিশুকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯২৪ সালে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে ‘শিশু অধিকার’ ঘোষণা করা হয়। শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সব ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শিশু অধিকার সনদে ৫৪টি ধারা এবং ১৩৭টি উপ-ধারা রয়েছে। এই উপ-ধারাগুলোতে শিশুদের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বৈষম্য থেকে বিরত থাকা, শিশুদের বেঁচে থাকা ও বিকাশের অধিকার, নির্যাতন ও শোষণ থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে পুরোপুরি অংশগ্রহণের অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো বর্ণিত রয়েছে।