স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুরুতে আমাদের যেমন পেছনে তাকাতে হবে—কারণ, এই ৫০ বছরের ইতিহাসকে পেছনে রেখেই আমরা এ অবস্থানে এসেছি—তেমনি দৃষ্টিটা সামনেও মেলে রাখতে হবে, কারণ সুবর্ণজয়ন্তী একটা গন্তব্যমাত্র, যাত্রা শেষ নয়। যাত্রাটা ভবিষ্যতের দীর্ঘ পথে। সেই পথে চলার পাথেয় আমাদের কিছুটা হয়েছে বটে, কিন্তু তা দিয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন। কীভাবে পাথেয় আরও বাড়ানো যায়, যাত্রাটা সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য করা যায়, তার একটা হিসাব এখনই করে ফেলতে হবে।
শুরুতে যে বিষয় সব কর্মযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত, তা হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধের একটা পটভূমি আছে, একটা ধ্রুপদি ইতিহাস আছে; লাখ লাখ শহীদ আর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের উদাহরণ আছে। কিন্তু এই ইতিহাসকেও আমরা দলীয় কাচের নিচে ফেলে দেখতে শুরু করেছি। এই ইতিহাসের একটা সম্পাদিত রূপ একসময় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো, যেখানে প্রধান নায়ককেই স্থানচ্যুত করা হলো। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি যে ছিলেন আমাদের প্রধান অনুপ্রেরণা—অস্বীকার করা কি কোনো বাঙালির পক্ষে সম্ভব? কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা যখন ভেবেছি একটা উপনিবেশ থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি, দেখা গেল অনেকের মনে সেই উপনিবেশ থানা গেড়ে বসেছে। ইতিহাস-সম্পাদনার কাজটা তারাই করল। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাসে যদি ঘাটতি থাকে, যদি আমাদের মনটা অন্য কেউ দখলে নিয়ে নেয়, ভবিষ্যতের পথচলা আমাদের কঠিনই থেকে যাবে।