সিলেটে রোকন-রিমার বেসামাল অপরাধকাণ্ড

মানবজমিন প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

শিশুদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে দুই বছর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল সিলেটের বহিষ্কৃত এস আই রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া। সঙ্গে ছিল তার বান্ধবী রিমা বেগমও। তখন র‌্যাব’র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল সে। এরপর কারাগারে ছিল দীর্ঘ দিন। বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে রোকন উদ্দিন। সঙ্গে তার ওই বান্ধবী রিমাই। এবার সে ইয়াবা নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ে। আর প্রকাশ্যেই করতো ইয়াবা বেচা-বিক্রি। নিজ বাসায় গড়ে তুলেছিল ইয়াবা সেবনের হেডকোয়ার্টার। সেই বহিষ্কৃত এস আই রোকন উদ্দিনকে সোমবার বিকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানায়, রোকনের অপরাধ সম্পর্কে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দারা তার অপরাধের খবর জানতেন। এ কারণে সোমবার যখন তার বাসায় অভিযান চালানো হয় তখন আস্তানায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল। সিলেটের এপিবিএন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এস আই রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া। সিলেট নগরীর মুন্সিপাড়ায় হচ্ছে তার মূল বাড়ি। পুলিশে চাকরি করার সুবাদে সিলেটের অপরাধ এবং অপরাধ নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সে জানে। এক সময় সে থানা ও ফাঁড়িতে চাকরি করেছে। তার দাপটের কাছে অসহায় ছিলেন এলাকার মানুষ। নানা অপরাধ করলেও এস আই হওয়ার কারণে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ২০১৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি। তখন নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় মেঘনা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতো এস আই রোকনউদ্দিন ভুঁইয়া। স্ত্রী পরিচয়ে সঙ্গে রাখতো বান্ধবী রিমাকে। রিমার বাড়ি নেত্রকোনার কালিয়াজুড়ির আটগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত মফিজুল মিয়া। স্ত্রী না হলেও রিমাকে সে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতো। বসবাস করতো একসঙ্গে। দাড়িয়াপাড়ার ওই বাসাতে এস আই রোকন গড়ে তুলেছিলো মিনি পতিতালয়। সেখানে শিশুদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করাতো। এলাকার মানুষ এসব জানলেও ভয়ে মুখ খুলতেন না। ঘটনার দিন দুই শিশুকে বাসায় আটকে রেখে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির খবর যায় র‌্যাবের কাছে। তখন র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে এস আই রোকন ও তার বান্ধবী রিমাকে গ্রেপ্তার করে। তার বাসায় বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে দুই শিশুকে। এ ঘটনার পর মামলা দায়ের করা হলে এস আই রোকনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এবং তাকে ও রিমাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় কয়েক মাস কারাগারে ছিল এস আই রোকন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় সিলেটের ৭ এপিবিএনে সংযুক্ত করে রাখা হয়। এদিকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিতর্কিত এই পুলিশ সদস্য। লিমাকে নিয়ে সে দাড়িয়াপাড়া থেকে অবস্থান নেয় সুবিদবাজার এলাকায়। সেখানে এ ব্লকের চন্দ্রিমা ৩ নং বাসার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। আর ওই বাসাতেই তারা গড়ে তোলে অপরাধ সাম্রাজ্য। ইয়াবা বিক্রি হতো ওই বাসাতে। এস আই রোকন ও রিমা হচ্ছে বাসার ইয়াবা ব্যবসার ডিলার। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ওই আস্তানায় সব সময় ভিড় করতো ইয়াবা সেবনকারীরা। তারা টাকা দিয়ে ইয়াবা কিনে ওই বাসাতেই সেবনের সুযোগ পেতো। এ কারণে বাসাতে দিনে ও রাতে ইয়াবাসেবীদের ভিড় লেগেই থাকতো। কখনো কখনো হতো অসামাজিক কাজ। বিষয়টি এড়িয়ে যায়নি স্থানীয়দের চোখে। কয়েক মাস ধরে তারা বাসার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এ ছাড়া ইয়াবাসেবীদের আনাগোনার কারণে এলাকার পরিবেশও নষ্ট হতে চলছিল। কিন্তু পুলিশ হওয়ার কারণে কেউই ভয়ে মুখ খুলেননি। সাম্প্রতিক সময়ে বরখাস্ত হওয়া এস আই রোকনের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি নজরে আসে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের। তারাও কয়েকদিন ধরে ওই বাসার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল। অবশেষে সোমবার বিকালে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ সুবিদবাজারের ওই বাসাতে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় বরখাস্ত হওয়া এস আই রোকন এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। সে বাসায় ঢুকতেও নিষেধ করে। কিন্তু কোতোয়ালি থানা পুলিশ তার নিষেধ উপেক্ষা করে বাসায় ঢুকে ইয়াবা সহ তাদের গ্রেপ্তার করে। মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখা থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- ওই বাসা থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- সুনামগঞ্জ  জেলার সদর থানাধীন মঙ্গলকাটা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে জসীম উদ্দিন,  কোতোয়ালি থানাধীন মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল রশিদের ছেলে বরখাস্তকৃত পুলিশের এস আই রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া, বিমানবন্দর থানাধীন হাউজিং স্টেট এলাকার ৪ নং লেনের ২১ নং বাসার হাজী সাজিদ আলীর ছেলে ফরিদ আহমদ, শাহপরাণ থানাধীন শিবগঞ্জ এলাকার ঊর্মি ৪১/২০ নং বাসার মৃত সাজু  মো. মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে সায়েম শাহরিয়ার। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মাদক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া আশরাফউল্লাহ তাহের জানিয়েছেন, এস আই রোকন এখন বরখাস্তকৃত। সে এপিবিএন পুলিশে সংযুক্ত ছিল। আগের ঘটনায় সে বরখাস্ত হওয়া থেকে এখনো বরখাস্তই রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ জানিয়েছেন, সিলেট পুলিশ এখন মাদক, ছিনতাইকারী সহ নানা ধরনের অপরাধীকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বরখাস্ত হওয়া এস আই রোকন মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us