হিমেল বরকত—হিমেল আর বেঁচে নেই শুনে যখন হঠাৎ কান্না পেল, তখন তার ‘চোখ’ নামের কবিতার এই চরণটাই মনে পড়ল।
একজোড়া চোখই তাকে প্রথমে মনে করল। সেই উনিশ-কুড়ি বছর বয়স থেকে যে বন্ধুকে চিনি, তার জন্য কখনো কাঁদতে হয়নি। তার সঙ্গে কথা বলাবালি ছিল, হাসি-গান ছিল, কান্না তো ছিল না। কিন্তু একজোড়া চোখেই ছিল সে। বন্ধু মরে গেলে ঠিক পাশেই একটা বিরাট গর্ত হয়ে যায়। সে অতল খাদে সব হাসিঠাট্টা গড়িয়ে পড়ে কেবল কান্নার শব্দই উঠে আসে।
এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বছরে পড়তে গিয়েছিলাম হিমেল বরকতের সঙ্গে। ভিন্ন বিষয়ে পড়েছি আমরা, কিন্তু কলাভবনে রোজ যাওয়া হতো, না হলে আড্ডা হতো না।
সাহিত্যের ছাত্র হিমেলের সঙ্গে সেখানেই, ঘাসের ’পরে এক আড্ডায় বসে পরিচয় হয়েছিল। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ভাই সে, শুনে আবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম, যেন রুদ্রর মুখের আদল খুঁজেছিলাম। মনে হয়েছিল, হ্যাঁ, ও ভাইয়ের মতোই দেখতে। আমরা যেমন সারাক্ষণ হইচইয়ে মেতে থাকতাম, হিমেল তেমন ছিল না; হিমেল গভীর ছিল, গম্ভীর ছিল।
মনে মনে ভেবেছি, ছোটবেলা থেকে অকালমৃত ভাই তার মনজুড়ে ছিল বলে হয়তো সে অত গম্ভীর হয়েছিল। ও যে কবি, সেটা জানতে আমাদের একটুও দেরি হয়নি। ক্যাম্পাসে থাকতে কবিতার বই এল, ‘চোখে ও চৌদিকে’। মনে আছে, খুব হইচই করে সেই বই কিনেছিলাম।