অন্য পেশায় শুঁটকি পল্লীর জেলেরা

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

উপজেলার সদরের দক্ষিণ পাশে ধলেশ্বরী শাখা নদীর তীরে গড়ে ওঠা জেলে পল্লীটি, শুঁটকির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এ পাড়ায় অন্তত: এক হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। তাদের পেশা নদীতে মাছ ধরা ও শুকনো মৌসুমে নদীর তীরে মাচা তৈরি করে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। বর্তমানে এ পাড়ায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য তৈরি মাচা মাত্র একটি। বিগত ১০ বছর আগেই এখানে অন্তত: ৫০টি মাচা তৈরি করে হাজার হাজার মন শুকনো ও ভেজা শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ হতো। এ গ্রামের অধিকাংশ জেলে জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে মাছের সংখ্যা কম। শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ নদী ভরাট হয়ে গেছে। জাল ফেলে মাছ ধরার কোনো ব্যবস্থা নেই। যে সব এলাকায় জলমহাল রয়েছে সেই এলাকার প্রভাবশালী জলমহালের ইজারাদার জেলেদের নদীতে মাছ ধরা নিষেধ করে দিয়েছে। নদীতে মাছ ধরতে গেলে তাদের নির্যাতনের শিকার হয়। এছড়াও সরকারিভাবে নির্দিষ্ট জলমহালের সীমানা নির্ধারণ থাকলেও এক শ্রেণির প্রভাবশালী ইজারাদার পেশীশক্তির বলে নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাটিবাঁধ ও জাল দিয়ে বেষ্টনী সহ বড় বড় গাছের ডালপালা ফেলে রেখে তাদের আওতায় নিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় নদীতে মাছের অভয়ারণ্য নাম করে ইজারাদাররা জায়গা দখল করে চারদিকে জাল দিয়ে বেষ্টনী করে মাছ মেরে ফেলে এসব কারণে জেলেরা শুঁটকি মাছ তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। জেলে পল্লীর বাসিন্দা পবিত্র দাস জানান, শুঁটকি তৈরিতে প্রথমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আলাদা আলাদা করে রাখতে হয়। যেমন দেশীয় মাঝে রমেদ্য কাটরী,পুঁটি মাছ, টেংরা, বাইনমাছ, গজাড় মাছ, আলনি, ছাবিলা, বালিয়ারা, ছোট চিংড়ি ইত্যাদি। পরবর্তীতে নদীর তীরে খোলা জায়গায় অন্তত: ১৫ ফুট উঁচু করে একটি বড় মাচা তৈরি করতে হয়। এ মাচার মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে শুকনো শুঁটকি তৈরি করে। এছাড়াও ভেজা শুঁটকি তৈরির পদ্ধতি অন্যরকম। প্রথমে মাছ কিছুটা শুকানোর পর বড় মাটির দেশীয় ভাষায় (মটকা) বলে থাকে এ সব মটকার ভিতর মাছগুলো পা দিয়ে মুড়িয়ে মটকা ভর্তি করে মাটি দিয়ে মটকার মুখ বেঁধে ফেলার পর অন্তত: ৫-৬ হাত মাটিতে পুঁতে রাখতে হয়। সপ্তাহ-খানেক পর মাটির নিচ থেকে এক এক করে মটকা তুলে ভেজা শুঁটকি তৈরি করা হয়। এ সব শুঁটকি বিভিন্ন এলাকার শুঁটকির আড়তের মালিকদের নিকট পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। অন্যদিক শুকনো শুঁটকির বস্তায় পুড়ে ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরেও রপ্তানি করে থাকে। বর্তমানে মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শুঁটকির তৈরিতে জেলেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। জেলেরা বর্তমানে শুঁটকি তৈরি করে লাভবান হতে না পারায় এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আগে যেখানে জেলে পল্লীতে ৫০টি মাচা হতো বর্তমানে এ পল্লীতে মাত্র ১টি মাচা। আগামীতে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থাই থাকবে না বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। অষ্টগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক জুয়েলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তৎকালীন মৎস্য কর্মকর্তা মো. সালেহীন আহাম্মেদের আমলে বর্তমান সরকার প্রতি এলাকায় প্রকৃত জেলেদের জন্য পরিচয় পত্র প্রদান করেছেন। ইতিমধ্যে মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে অষ্টগ্রামে বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে পরিচয় পত্র প্রদান করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের জন্য পৃথক ঋণ প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রকৃত একজন জেলেকে মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনার জন্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ৩ বছর মেয়াদি ৬ কিস্তিতে পরিশোধ করে ঋণ নেয়া বিধান রয়েছে। এছাড়া মৎস্য ঋণের আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই। এই হাওরের জেলেদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীর ইজারা বাদ দিয়ে উন্মুক্ত জলাশয় মাছ ধরতে পারলে জেলেদের জীবনমান পুনরায় ফিরে পাবে আর জনগণের মাছের চাহিদার ঘাটতি পূরণ হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us