শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজের দাবি মৌলভীবাজার ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
করোনায় চাকরিচ্যুত-কর্মহীন শ্রমিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিং চালু। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের নির্দেশে দেশীয় কাঁচামালনির্ভর পাটকল বন্ধ নয়, পাটকল শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও আধুনিকায়ন করা। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭০ টাকা নির্ধারণ এবং অবিলম্বে বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ করে দলই চা-বাগান চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি। ২৬শে আগস্ট রাতে সংগঠনের কোর্টরোডস্থ (মনুসেতু সংলগ্ন) কার্যালয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিতে অনুষ্ঠিত শ্রমিকসভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো. সোহেল আহমেদ, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্মা, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক তারেশ বিশ্বাস সুমন, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি. নং চট্ট. ২৩০৫-এর সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি. নং চট্ট. ২৪৫৩-এর সহ-সভাপতি মো. গিয়াস মিয়া ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. জসিমউদ্দিন, শ্রমিক নেতা দুলাল খাঁ প্রমুখ।সভায় বক্তারা বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে মালিকদের দুরভিসন্ধি ও অবহেলার শিকার হয়ে বেতন-বোনাস নিয়ে দুর্ভোগের পাশাপাশি ছাঁটাই এবং লে অফের যন্ত্রণা শ্রমিকরা প্রচণ্ড কষ্টে অতিবাহিত করেছেন। সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে প্রথমে ব্যক্তিমালিকানা, পরবর্তীতে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে দেশীয় কাঁচা মালের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বিক্রির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান সময়ও ওই একই নীতি-নির্দেশনায় পরিকল্পিতভাবেই এই মিলগুলোকে চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দিয়ে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করার পথেই হাঁটা হচ্ছে। পাটকলসমূহ বন্ধ করে পাটের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় এক কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, করোনা দুর্যোগে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এবং এখনো অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও নিম্নআয়ের কর্মজীবী অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শ্রমিকদের এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে না কোনো মালিক তাদের সহায়তা করছেন। না তারা পাচ্ছেন সরকারি সহায়তা। উপরন্তু সম্প্রতি কিছুসংখ্যক হোটেল রেস্টুরেন্ট খুললেও অধিকাংশ শ্রমিককে এখনো কাজে নেয়া হয়নি। আর যাদের কাজে নেয়া হয়েছে তাদেরকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করালেও আগের থেকে কম, কোন কোন ক্ষেত্রে অর্ধেক মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করাচ্ছেন। এসব বিষয়ে নজর রাখার জন্য সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। নেতৃবৃন্দ করোনার দুর্যোগকালে চা ও রাবার শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা না করা এবং দীর্ঘ ২০ মাস অতিবাহিত হতে চললেও মজুরি বৃদ্ধি না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি মাত্র ১০২ টাকা। তদুপরি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মালিকপক্ষ কমলগঞ্জ উপজেলার দলই চা-বাগান গত এক মাস যাবত বন্ধ করে দিয়ে হাজারো শ্রমিক পরিবারের জীবন ও জীবিকা নিয়ে প্রহসনের খেলা খেলছেন। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৬-৭ জনের একটি শ্রমিক পরিবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭০ টাকার নির্ধারণ এবং দলই চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ ও বাগান চালু করার দাবি জানান।