ধোবাউড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারীদের দায়িত্বহীনতায় কাগজে কলমে চলছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্মিত হওয়া ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারীরা ক্লিনিকে প্রতিদিন কাগজে কলমে উপস্থিত থাকলেও দিনের পর দিন থাকছেন অনুপস্থিত। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য গেলে ক্লিনিকে কাউকে না পেয়ে সেবা বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত সরকারি ওষুধ সরবরাহ থাকলেও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করা হলেও বিরোধী দল ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে বর্তমান সরকার পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু করে। সরকারি বেতন স্কেলে তিন মাসের প্রশিক্ষণে প্রতি ক্লিনিকে তিনজন করে নিয়োগ দেয়া হলেও সরকারের এই প্রশংসনীয় পদক্ষেপটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে বর্তমানে এর কার্যক্রম শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। এ নিয়ে সরজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোপাইটার (সিএইচসিপি) ও দায়িত্বরত চিকিৎসক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত বসেন না। অনেকেই সপ্তাহে একদিন আবার কেউ কেউ মাসে একদিন এসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ করেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। উপজেলার চন্দ্রকোনা গ্রামের আ. শহীদ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমরার চন্দ্রকোনা কমিউনিটি ক্লিনিক মাসে এহাদ্দিন খুলে, তুবও অফিসও গেলে ওষুধ পাওয়া যায় না।’ দুধনই গ্রামের রফিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের দুধনই বাজারের ক্লিনিক মাঝেমধ্যে খোলে কিন্তু কোনো রোগীই চিকিৎসা পায় না, চিকিৎসার জন্য গেলেও বলে ওষুধ নাই, সরকার নাকি ওষুধ দেয় না।’ এ ছাড়াও এমন অগণিত অভিযোগ মেলে উপজেলার ভেদিকুড়া, উত্তর পঞ্চনন্দপুর, সোহাগীপাড়া, বলরামপুর, রায়কান্দুলিয়া, গোবিন্দপুর, সানন্দখিলা তারাইকান্দি, মধ্যশালকোনা, রাউতি, পাতাম, লাঙ্গলজোড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। সপ্তাহ-পনের দিনে একদিন ক্লিনিকে উপস্থিত হলেও কিছুক্ষণ থেকেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান দয়িত্বরত চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও সপ্তাহে একদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত একজন মেডিকেল অফিসার ক্লিনিকে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও ক্লিনিক বন্ধ থাকায় যাচ্ছেন না কোনো ডাক্তার। অপরদিকে ক্লিনিকে রোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য দেয়া ওষুধও বিতরণ না করে তা বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবু হাসান শাহীন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরতদের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে মনিটরিং চলছে এবং ইতিমধ্যে দু’জনকে শোকজ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।