দু’দিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে ঢাকা এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। পরিবর্তিত বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে এ বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি শ্রিংলার দ্বিতীয় সফর। এর আগে মার্চের শুরুতে প্রথম ঢাকা সফরে এসেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে শ্রিংলা ঢাকায় অবতরণ করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে শ্রিংলার সফর নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। বিশেষ করে তিনি কি বার্তা নিয়ে এসেছেন তা জানতে উদগ্রীব কূটনৈতিক মহল। এরপরই ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানানো হয় পররাষ্ট্র সচিবের সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে তার সফরসূচির বিস্তারিত কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। সফরসূচির অংশ হিসেবে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সফরটি ঝটিকা নয় বরং রেগুলার বা নিয়মিত বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। বলেন, আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে অনেক ইন্টার্যাকশন হয়। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে সে হিসেবে কমই হয়েছে। সব সময় আলোচনায় সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি থাকে। তবে এবার কোভিড-১৯ নিয়ে সহযোগিতার বিষয়টি থাকছে। সচিব বলেন, তাদের দেশে এখন করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা কে কোন পর্যায়ে আছি সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার টিকার ট্রায়ালের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে জানিয়ে সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা অফার করবো, সুযোগ থাকলে অক্সফোর্ডের ওই টিকা আমাদের এখানেও ট্রায়ালের। তাদের সঙ্গে আমরা লন্ডন মারফত যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেন, এখন ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রডিউসার এই মুহূর্তে ব্যবসায়িক দিকটা দেখছেন। সুতরাং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেগুলো ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বা চালু হচ্ছে, সেগুলো পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়টিরসহ অন্য টিকাগুলো যাতে বাংলাদেশ দ্রুত পায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সেটা অ্যামেরিকানদেরটা হোক, অক্সফোর্ডেরটাই হোক- তারা ইন্ডিয়াতে ট্রায়াল দিচ্ছে, এগুলোর সবগুলো কীভাবে এক্সেস আমরা পেতে পারি দ্রুত, সে ব্যাপারে সবার সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে, সেটার পার্ট হিসাবে তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করবো। আমরা আলাপ আলোচনা করব, আমরা কীভাবে সবার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি। সুতরাং আমাদের যেটা সবচেয়ে সেইফ মনে হবে বা সবচেয়ে বেশি ইউজফুল মনে হবে আমরা সেদিকেই যাব। সব অপশনই আমাদের জন্য থাকা উচিত।সচিব বলেন, গত ছয় মাসে বেশকিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ট্রান্সশিপমেন্ট ও রেলওয়ের সহযোগিতা ত্বরান্বিত হয়েছে। শ্রিংলার সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু স্থান পাবে কিনা জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দেখি, হতে পারে। তারা তো এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতার কথা বলে আসছে। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করছে যাতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন হতে পারে। এ বিষয়ে আপডেট জানতে চাইতে পারি। মোমেন আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের সম্পর্ক অনেক গভীর। এ সম্পর্কের যত্ন নেয়া লাগে যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়। এছাড়া সমপ্রতি ভারতের মিডিয়ায় কিছু কাল্পনিক নিউজ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হবে যাতে সম্পর্কে কোনো গ্যাপ না থাকে। গত জানুয়ারিতে বিদেশ সচিবের দায়িত্ব নিয়ে শ্রিংলা মার্চে প্রথম ঢাকা সফর করেন। সেটি একদিকে যেমন ছিল শুভেচ্ছা সফর তেমনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যও ছিল তার সফরের অন্যতম দিক। ১৭ই মার্চ করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনাও ছিল সেই সফরের অন্যতম লক্ষ্য। তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে আগাম ঘোষণায় বিদেশ সচিব ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু এবারে তার সফরটি হচ্ছে অনেকটা নিঃশব্দে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রিংলার সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে বলে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন আশা প্রকাশ করেন ব্রিফিংয়ে।ওদিকে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার এই সফর নিয়ে নানামুখী পর্যালোচনা করছে ভারতীয় মিডিয়া। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে এ সফরের গুরুত্বও উঠে এসেছে ভাতীয় মিডিয়ার খবরে।