খেলাপি ঋণের দুঃস্বপ্নে ভুগছেন ব্যাংকাররা, গ্রাহকরা স্বস্তিতে

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৭:০২

.tdi_2_77d.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_77d.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});দুর্নীতি আর নীতির ফুলঝুরিতে আসল নকল চেনার সূত্র বারবার মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছিল অথচ মানুষ মানুষের জায়গায় ছিল, কিন্তু মৌলিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ডের সাথে মানুষের সখ্যের ফলাফলে পৃথিবী কেন যেন বারবার মানুষের দিকেই অভিশাপের আঙ্গুল তুলতে বাধ্য হয়েছিল। প্যানডেমিক করোনা ভাইরাস মনে হয় প্রকৃতির এক নীরব প্রতিশোধ। কোভিড-১৯ সংকটের প্রভাব শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। মানুষের আয় কমেছে, অনেকে বেকার হয়েছে, অনেকে চাকরি হারিয়েছে। কিন্তু সংসার খরচ কমে নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। মাস শেষে বাড়িভাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন, চিকিৎসা খরচ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিশোধ বাবদে খরচ করতে হচ্ছে। খাদ্য পন্যের দাম কম-বেশি বেড়েছে। ব্যবসায় লোকসান কিংবা বেচা কেনা কমে গেলেও কর-ভ্যাট বা শুল্ক দিতে হচ্ছে। প্রায় ক্ষেত্রেই যাতায়াত খরচের পাশাপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বাবদে খরচ নতুন ভাবে সংযুক্ত হয়েছে মানব জীবনে। সব মিলিয়ে দিশেহারা মানুষ উত্তরনের উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব মানব জীবনে যেমন পড়েছে তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের সঙ্গে খেলাপি ঋণের সম্পর্কটা পূর্ব পরিচিত নই। খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় এক সমস্যা। এ দেশে ঋণ খেলাপের সংস্কৃতি গত শতকের আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে চালু আছে। কোন কারণে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর যখন কোন ঋণ বা ঋণের কিস্তি ফেরত পাওয়া না যায় তখন ঐ ঋণকে খেলাপি ঋণ বলে। করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতির বেশির ভাগ খাতই ক্ষতিগ্রস্ত। এ নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেক শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। তাই ঋণগ্রহীতার ব্যবসায় করোনার নেতিবাচক প্রভাব সহনীয় রাখতে ঋণ পরিশোধ ও শ্রেণীকরণের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে গ্রাহকদের ব্যবসা সচল রাখার জন্য নতুন ঋণ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হবে না। আবার মন্দার কারনে খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ বাড়বে না। করোনা তান্ডব শুরু হওয়ার পর গত মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ নীতিতে শিথিলতা এনেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম শিথিলতা ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে আগের নির্দেশনা সংশোধন করে ঋণ পরিশোধে শিথিলতার মেয়াদ আরো তিনমাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত কার্যকর করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির ফলে গ্রাহকরা যে সুবিধা ভোগ করছেন তা হলো- ১) চলতি বছরের ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না। ২) এ সময়ে কোন খেলাপি গ্রাহক ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলে তার ঋণমান উন্নত করা যাবে। ৩) নয় মাসে যে কয়টি ঋণের কিস্তি বিলম্বিত হবে তা সমসংখ্যক বর্ধিত ঋণের কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দিতে হবে। ৪) ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও নয়মাস ধরে তারা খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন। ৫) অন্যদিকে স্বল্প মেয়াদি কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্রঋণ সহ ঋণের বিপরীতে ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত সময়কালে প্রদেয় কিস্তিগুলো ডেফারড হিসেবে বিবেচিত হবে। ৬) তলবি ঋণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মেয়াদ থেকে নয় মাস বা ৩১শে ডিসেম্বর যেটি আগে ঘটে পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এ সুবিধা চলাকালে ঋণের ওপর সুদ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা বহাল থাকবে। ৭) উপরোক্ত সময়ের মধ্যে ঋণের ওপর কোনরূপ দন্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না। এর ফলে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। আবার যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি ছিলেন তারা আরো একটি ট্রাম্প কার্ড পেয়ে গেলেন। এমনিতেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করেই কাটান। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ খেলাপিরা অনেকটা নিশ্চিন্তে আছেন। এতে সবচেয়ে সমস্যায় পতিত হয় দেশের ব্যাংকিং খাত। বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে ঋণ আদায় একেবারেই থমকে গেছে। গত ছয় মাস বা তার ও অধিক সময় ধরে ঋণের কিস্তি বা ত্রৈমাসিক সুদ পরিশোধ না করায় ব্যাংক গুলোতে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যাংকই কলমানি বাজার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোতে অর্থ ধার করে চলছে। এ সময়সীমা আরো তিনমাস বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাশ ফ্লোর প্রভাব অনেকটাই নেতিবাচক। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে এমনিতেই তারল্য সংকট তার ওপর করোনাকালীন প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ব্যাংকের ঘাড়ে পড়েছে। প্রণোদনা তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যাংকের স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনাকেই যোগান দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণ গ্রহীতাদের এক অংকের সুদ দেওয়ার জন্য আমানতকারীদের সুদ কম দিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবার খেলাপির অনেকেই নানা কৌশলে যেমন উচ্চ আদালতে রিট করার মাধ্যমেও ঋণ পরিশোধ না করে দিন-মাস-বছর পার করছেন। খেলাপিরা যাতে রিট করে ব্যাংকের টাকা আটকে দিতে না পারেন, সে জন্য বিচার বিভাগকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ খেলাপি গ্রাহকদের কাছে আটকে থাকলেও আমানতের সুদের ভার বহন করতে হচ্ছে ব্যাংক গুলোকে। এজন্য খেলাপি ঋণ শুধু কমিয়ে আনাই নয় যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনতে হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে খেলাপি আইন শিথিল, অবলোপন নীতিমালায় ছাড়, গণছাড়ের আওতায় পুন: তফসিল, স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থা সহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ কে কমিয়ে আনার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যারা ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না তাদের সংগে প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে টাকা ফেরৎ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে পাশাপাশি এমনভাবে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে হবে যাতে টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হন। তবে সবার আগে প্রয়োজন বিভিন্ন আইনের পরিবর্তন। এখন অনেক ঋণ খেলাপি আদালত থেকে আদেশ নিয়ে নিজেকে ঋণ খেলাপির বাইরে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব সুযোগ বন্ধ করা প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ মানে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা আটকে যাওয়া। এর সামাজিক ও আর্থিক নানামুখী প্রভাব রয়েছে। ১) এ আটকে যাওয়া বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকে প্রতিবছর কর প্রদান করতে হয় এমনকি আইনি খরচও পরিচালনা করতে হয়। ২) সুদ বা লাভ স্থগিত থাকে কিন্তু এ জন্য ব্যাংককে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ৩) ব্যাংকের মুনাফা কমতে থাকে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দুই মাসের সুদ আয় স্থগিত করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকের কমিশনও কমে যাচ্ছে। ৪) এই বিনিয়োগ যেহেতু ঘূর্ণায়মান বা রি-সাইকেল এর মধ্যে না থাকায় নতুন করে ঋণ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে কর্মসংস্থানের মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থবির হয়ে পড়ে। ৫) সর্বোপরি সব পরিমাণ খেলাপি ঋণের উপর আমানতকারীকে লাভ প্রদান করতে হয়। এতে আমানতের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ৬) অন্যদিকে ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি হয় এবং মূলধনও চাপে পড়ে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষভাবে গত শেষ ১০ বছরে ব্যাংক খাতে ডিপোজিট যেমন বেড়েছে তেমনি রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছে সংগে বেড়েছে বিনিয়োগ এবং ঋণের পরিমাণও বেড়েছে বহুগুন। সেই সংগে পাল্লা দিয়ে খেলাপি ঋণও বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১০ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই মুদ্রা খেলাপি হয়ে গেছে। মোট বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে আন্তজার্তিক তহবিল এর প্রতিবেদন অনুসারে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র দ্বিগুনেরও বেশি। প্রতিবেদন অনুসারে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৬ শতাংশ। এ সবের মধ্যে আদালতের স্থগিতাদেশ, পুন:তফসিল ঋণ ও রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাই খারাপ। তার মধ্যে বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ্য যে ২০১৮ সালের শেষে যেখানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। উল্লেখ্য গত মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋন দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.০৩ শতাংশ। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণও হার দুটোই কৌশল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমেছে। বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুন:তফসিল এবং করোনাকালীন সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে। ঋণের সুদহার এক অংকে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামানোর প্রধান বাধা ছিল নন পারফর্মিং ঋণ বা খেলাপি ঋণ। এটা সত্যিকার অর্থে কমাতে না পারলে ব্যাংক খাতের অবস্থা আরও নাজুক হবে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস এর কারনে ক্ষুদ্র আমানত কারীদের অনেকে সঞ্চয় ভেঙ্গে খাওয়ার কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান তারল্যে সংকটে ভুগছে। এই সংকট মোকাবেলায় স্বল্প মেয়াদে তহবিল সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তহবিল সংগ্রহে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে সু-শাসন, জবাবদিহিতা, সততা, দক্ষতা, ন্যায় বিচার, অর্থ পাচার রোধ এবং দেশে অপরাধের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভবপর নয়। লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতি সংগঠক.tdi_3_dd9.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_dd9.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us